সেই নির্মম গণহত্যার কথা আজও ভূলতে পারেনি মানুষ

আসাদুজ্জামান আসাদ, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি ডিসেম্বর ১৫, ২০২১, ০৩:৫১ পিএম
ছবি: আগামী নিউজ

কুড়িগ্রাম: সেনপাড়ার মানুষ আজো ভূলতে পারেননি সেই দিনের নির্মম হত্যাযজ্ঞ। বিজয়ের মাস আসলেই সেনপাড়া ও ঠাঁটমারীর  মানুষের স্মৃতিপটে ভেসে উঠে পাকবাহিনীর নির্মম নরহত্যা, অগ্নিদাহ, লুটপাট সহ নানা বর্বরোচিত অপকীর্তি।

যুদ্ধ চলাকালীন একই দিনে রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের নাখেন্দা সেনপাড়া গ্রামের ৫ জন নিরাপরাধ ও সাধারন মানুষকে সারিবদ্ধ করে গুলি করে হত্যা করেছিল পাকহানাদার বাহিনী। শুধু হত্যা করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি তারা। প্রাণ ভয়ে পালিয়ে থাকা গ্রামের সাধারণ মানুষদের বাড়িতে লুটপাট চালানোর পর অগ্নিসংযোগ করেছিল গোটা গ্রামে।
        
৭১এ মুক্তিযুেদ্ধর শুরুতে পাক বাহিনী রাজারহাট-কুড়িগ্রাম সড়কের পার্শ্বে ঠাটমারীতে ক্যাম্প গড়ে তোলে। এখান থেকে রাজাকার ও তাদের সহযোগীদের মাধ্যমে পরিকল্পনা মাফিক বিভিন্ন স্থানের সাধারন মানুষের ঘর বাড়িতে অগ্নি সংযোগ, নরহত্যা, ধর্ষন, লুটপাট সহ নানা র্ববরোচিত কর্মকান্ড পরিচালনা করে তারা। যুদ্ধ চলাকালীন প্রায় প্রতিদিন কোন না কোন স্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সাধারন মানুষদের ধরে এনে নির্যাতন শেষে গুলি করে হত্যা করা হতো। পাক বাহিনী এভাবে কত মানুষকে হত্যা করে লাশ পার্শ্বস্ত ঠাঁটমারী ব্রীজের নীচে পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছে এর সঠিক পরিসংখ্যান কেউ জানেন না। তবে পানির ¯্রােতে অগনিত মানুষের লাশ ভেসে যেতে দেখেছেন এলাকাবাসী। এরমধ্যে ১১জন মুক্তিযোদ্ধাকে ওই স্থানে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসব শহীদের রেকর্ড রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও সরকারী হিসেবে। 

নির্মম হত্যাযজ্ঞের ঘটনা মনে পরলে আজও উপজেলার ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের সেনপাড়ার মানুষদের লোম শিউরে উঠে। পাকবাহিনীর হাতে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার দেবেন্দ্র নাথ সেনের বড় পুত্র বিরেন্দ্র নাথ মাষ্টার ঘটনার স্মৃতিচারন করে জানান,স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে এক সকালে ঘড়ির কাটায় প্রায় দশটা। গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ সকালের খাবার খেয়ে কাজে বেরানোর সময় আকস্মিক নরপিচাস হানাদার বাহিনী অস্ত্রস্বস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দলেবলে হিন্দু অধ্যুষিত ওই গ্রামে প্রবেশ করে। তাদের উপস্থিতিতে প্রাণভয়ে দিকবেদিক পালিয়ে যায় অধিকাংশ মানুষ। এরমধ্যে মুক্তি বাহিনীকে সহযোগীতার অভিযোগে পাকবাহিনী বাড়ি বাড়ি খুঁজে ধরে নিয়ে আসে গ্রামের দেবেন্দ্র নাথ সেন, কান্দুরা সেন, খোকা সেন, আশ্বিনী বিশ্বাস ও টগবগে যুবক নারায়ন চন্দ্র বিশ্বাসকে।

বিরেন্দ্র নাথ বলেন,পাকবাহিনী চলে যাওয়ার পর বাবা ও স্বজনদের মৃত্যুর সংবাদ শুনে ঘটনাস্থলে এসে দেখি ততক্ষনে সব শেষ হয়ে গেছে। পুরো গ্রাম আগুনে জ্বলছে। পরে ভীত সন্ত্রস্ত এলাকাবাসীর পরমর্শ ও সহযোগিতায় ৫জনের লাশ ধর্মীয় রীতিনীতি পালন ছাড়াই মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল।

বিজয়ের মাস এলেই স্মৃতি বিজড়িত ভয়ানক ঘটনার কথা মনে পড়লে এখনো শিউরে উঠেন রাজারহাটের ঠাঁটমারী ও নাখেন্দা সেনপাড়া গ্রামের মানুষ। ১৯৯৯ইং সনে শহীদদের সম্মানার্থে ব্যক্তি অর্থায়নে গণহত্যার স্বাক্ষী স্বরুপ সেনপাড়ায় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করেন শহীদ পরিবারের সদস্যগণ। এছাড়া ২০১১ইং সনে সরকারি অর্থায়নে ঠাটমারী বদ্ধভূমি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।   

রাজারহাট উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রজব আলী জানান,বিজয় দিবস,স্বাধীনতা দিবস ও রাজারহাট হানাদার মুক্ত দিবসে সরকারি ভাবে ঠাঁটমারী বদ্ধভূতিতে নানা কর্মসূচী পালন করা হলেও সেনপাড়া স্মৃতিস্তম্ভে বিশেষ কোন কর্মসূচী পালন করা হয় না।

আগামীনিউজ/ হাসান