৫০ বছর ধরে বাঁশি বিক্রি করেন কমল কান্তি

আনোয়ার হোসেন আকাশ, রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি ডিসেম্বর ১১, ২০২১, ১১:৫১ এএম
ছবি: আগামী নিউজ

ঠাকুরগাঁও: বয়স ৭০ ছুঁই ছুঁই। এই বয়সে শহর, গ্রাম, রেলস্টেশন আর পথে পথে ঘুরে সুর তুলে বিক্রি করছেন বাঁশের বাঁশি। আকারভেদে প্রতিটি বাঁশি বিক্রি করেন ২০ থেকে ১০০ টাকায়। কিভাবে বাঁশি বাজাতে হয় তা আবার ক্রেতাকে শিখিয়ে দেন। সেই ১৭ বছর বয়সে কমল কান্তি রায়ের হাত ধরে ভবেশ চন্দ্র রায়ের বাঁশি বাজানো শেখা। সেই থেকে সুরও আয়ত্ত করেছেন কয়েক হাজার গানের। পল্লিগীতি, ভাওয়াইয়া, লালনগীতি, বিচ্ছেদ ও পুরোনো বাংলা সিনেমার গানের সুরও তুলতে পারেন তিনি।

চিরিরবন্দর থেকে ঠাকুরগাঁও আসেন দুই টাকা রোজগারের জন্য। ৫০ বছর পথে পথে, বাজারে, রেলস্টেশনে, পার্কে, বাঁশি বেচেন। বাঁশি বাজান। কীভাবে বাঁশি বাজাতে হয়, তা আবার ক্রেতাকে শিখিয়ে দেন। এদিয়ে যা আয় হয়। তাই দিয়ে সংসার চালান।

এক মেয়ে এক ছেলে আর স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিছুদিন যাতায়াত ছিল। দারিদ্র্যের কারণে পড়ালেখা হয়নি। অল্প বয়স থেকেই আয় রোজগারের দিকে ঝুঁকতে হয়েছে। বয়স চলছে ৬৯। এখনো তাই বেশি আয়ের আশায় এক শহর থেকে আরেক শহরের পথে পথে।

চিরিরবন্দর উপজেলার কাউনিয়া তার বাড়ি। পাশের ভুষিরবন্দর হাট থেকে বাঁশি কিনে আনেন। ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও বীরগঞ্জ কিংবা ২৮ মাইলে তাকে দেখা যায়।

পথে পথে ঘুরে বাঁশির সুর তোলা আর মানুষকে আকৃষ্ট করাই তার ব্যবসা। কেউ বাঁশি শুনে খুশি হয়ে এক কাপ চা খেতে বলে। কেউবা বাঁশি কিনে নেয়।

আকারভেদে প্রতিটি বাঁশি বেচেন ২০ থেকে ১০০ টাকায়। ২/৩শ' টাকাও বিক্রি হয় না কোনোদিন। তাই অস্থিরতা তাকে ঘিরে ধরেছে। ইদানীং অসুস্থতাও পেয়ে বসেছে। মেরুদণ্ডে ব্যথা। অর্থাভাবে চিকিংসা করতেও পারেন না তিনি। সন্তানাদির কী হবে? সেকথা ভাবতেই চোখে জল ছলছল।

গুরু কমল কান্তি রায়ের হাত ধরে ভবেশ চন্দ্র রায়ের বাঁশি বাজানো শেখা। সেই থেকে সুরও আয়ত্ত করেছেন কয়েক হাজার গানের। পল্লিগীতি, ভাওয়াইয়া, লালনগীতি, বিচ্ছেদ ও পুরোনো বাংলা সিনেমার গানের সুরও তুলতে পারেন তিনি।

মেরুদণ্ডে ব্যথা নিয়ে দুর্বল হাটা এই বংশীবাদকের সুর নিভে গেলে কী হবে তার সংসারের? এমন অনিশ্চিত জীবন নিয়েই ভবেশ রায়ের মতো দেশের দরিদ্র মানুষেরা বেঁচে আছেন। জন্মই যেন এদের আজন্ম পাপ, তবুও প্রাণ থাকা পর্যন্ত লড়তে হবে। তাই কখনো নীরবে বসে বসে বেদনার সুর তোলেন এই বংশীবাদক। তার এই সুর নীতিনির্ধারকদের কান পর্যন্ত যায় না, যারা উপরতলায় বসে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর ছক আঁকেন।

ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোঃ শামীম হোসেন বলেন, এ ধরনের ভাসমান বিক্রেতাদের জরিপ চালানো যেতে পারে। এদের মধ্যে গ্রুপ করে সেবাধর্মী বিভিন্ন প্রকল্পে নিয়োজিত করলে ভাল ফল আসতে পারতো। কিংবা এদের সরকারিভাবে কারিগরি কোন প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশের বাইরে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা গেলে তারাও ভাল থাকতো। দেশও লাভবান হতো।

আগামীনিউজ/ হাসান