ফেডারেল মেডিকেলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১০, ২০২১, ০৩:৩৪ পিএম
ছবিঃ সংগৃহীত

ঢাকাঃ

ঢাকাঃ অভিযোগের পাহাড় জমেছে রাজধানীর ফার্মগেটের ফার্মভিউ সুপার মার্কেটে অবস্থিত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফেডারেল মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ সোনা মিয়া ওরফে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে।

একই সাথে আইন পেশা ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে চাকুরী করা,  বেআইনি ভাবে শিক্ষক বেনিফিটের সরকারী অর্থ আত্মসাৎ, মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ, পাবলিক পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৮ লক্ষাধিক টাকা কলেজের রশিদের মাধ্যমে না নিয়ে কাঁচা রশিদে আদায় করে আত্মসাৎ সহ আয় বহির্ভুত অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন মোঃ সোনা মিয়া।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে আইন পেশার পরিচয় গোপন করে (লেকচার বেজড) দৈনিক ভিত্তিক প্রভাষক হিসেবে ফেডারেল মেডিকেল কলেজের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দৈনিক ভিত্তিক প্রভাষক হিসেবে চাকুরী করেন। ২০১০ সালে ম্যানিজিং কমিটিতে অবৈধভাবে প্রভাব খাটিয়ে হোমিওপ্যাথিক বোর্ড কর্তৃক গঠিত সিলেকশন কমিটির দ্বারা সিলেক্টেড না হওয়া স্বত্বেও সহকারী অধ্যাপক পদে বেআইনি ভাবে  আত্মিকরণের নামে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি হাসিল করেন। পরবর্তীতে তিনি ২০১৫ সালে কলেজ ফান্ডে দুই লক্ষাধিক টাকা অনুদান দিয়ে ম্যানিজিং কমিটির সদস্য পদ বাগিয়ে নিয়ে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে কাজ শুরু করেন।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এর আইন অনুযায়ী কোন আইনজীবী সাধারণত অন্য পেশা বা ব্যবসা কিংবা এমন পেশা বা ব্যবসায়ে একজন সক্রিয় অংশীদার বা বেতনভুক্ত কর্মকর্তা পদে জড়িত থাকতে পারবেন না।

অথচ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সোনা মিয়া ২০১৭ সালে বার কাউন্সিলের আইন ভঙ্গ করে ২০১৭ সালে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যা বার কাউন্সিলের বিধির ৭২ এর পৃষ্ঠা ১২৭ এর ৮ ক্রমিক নং এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

এ বিষয়ে হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোজাম্মেল হক জানান, কোন ভাবেই একজন আইনজীবী হিসেবে বেতনভুক্ত হয়ে কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকতে পারবে না। এটা বার কাউন্সিল বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সোনা মিয়া যেটা করেছেন সেটা শাস্তিযোগ্য।

শুধু বার কাউন্সিলের নিয়মই ভাঙ্গেননি এই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ভারপ্রাপ্ত পদে যোগদান করে গড়েছে অবৈধ সম্পদের পাহাড়। কলেজের পাবলিক পরীক্ষার পূর্বে শিক্ষার্থীদের থেকে ৭৫০ ও ৮০০ টাকা হারে কাঁচা রশিদের মাধ্যমে কলেজের হিসাব রক্ষকের স্বাক্ষরে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা আদায় করে তা কলেজ ফান্ডে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন। সে কাঁচা রশিদের কপি আমাদের হাতে এসেছে। এছাড়াও অহিদা আক্তার নামের এই প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তিন লক্ষাধিক টাকা ঘুষ নিয়ে অবৈধভাবে তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেছেন।

সরকারি এবং বেসরকারি কর্মচারী বিধি অনুযায়ী কোন শিক্ষক যদি ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার হোন তার গ্রেফতারের দিন থেকে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে প্রতিষ্ঠান থেকে বরখাস্ত বলে গণ্য করার কথা। এই বিধিমালা অনুযায়ী কলেজের অস্থায়ী শিক্ষক ফিরোজ হোসেনকে ২০১৭ সালের ৭ জুন সাময়িক বরখাস্থ করা হলেও একই বছর ডিসেম্বরে দুই লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে তাকে স্বপদে বহাল করেন তিনি। এছাড়াও কলেজের অপর শিক্ষক যে এম নুরুল হকের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের নভেম্বরে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল ১ এর আদেশে শেরে বাংলা নগর থানা কর্তৃক জেল হাজতে প্রেরিত হলে মামলা নিষ্পত্তি না হলেও দুই লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে তিনি এই শিক্ষককে সকল সুবিধা গ্রহণের সুযোগ প্রদান করেন।

এছাড়াও নামে বেনামে কয়েকজন শিক্ষক কর্মচারীর যোগসাজশে ভুয়া ভাউচার বানিয়ে কলেজের ইত্যাদি খরচের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কলেজের মূল্যবান যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র বিক্রি করেও টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এই অবৈধ আয়ের মাধ্যমে মোঃ সোনা মিয়া তার গ্রামের বাড়ীতে গড়েছেন প্রাসাদ। ২য় স্ত্রীকে ৩০ ভড়ি সোনা উপহার দেওয়াসহ তার বেতনের প্রায় দিগুণ টাকার বেশি ভাড়া দিয়ে ২য় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করছেন ঢাকাতে।

এদিকে কলেজের আরেক শিক্ষক প্রভাষক কামরুল হুসাইন ২০০৪-২০০৫ ও ২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষে ডিএইচএমএস (ডিপ্লোমা) এবং একই সময়ে উচ্চ মাধ্যমিক সনদ হাসিল করেন। এই সনদে তিনি এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে তার এই জালিয়াতির বিরুদ্ধে দৃষ্টিগোচর হলে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে বোর্ডের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রাক্কালে হোমিওপ্যাথিক বোর্ড সদস্য ডাঃ ইফতেখারের বিরোধীতার কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। এরপর ২০২০ প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির তৎকালীন সভাপতি ও ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর দৃষ্টিগোচর হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেও কামরুল হুসাইন তার জালিয়াতি ঢাকতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ সোনা মিয়াকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ প্রদান করায় তা আজ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখিনি। বোর্ড সদস্য ডাঃ ইফতেখারের ছত্রছায়ায় সোনা মিয়া তার অপকর্ম করে চলেছেন।

শুধু অর্থ আত্মসাৎ কিংবা অবৈধভাবে চাকরির অভিযোগই নয়, কলেজের এক নারী শিক্ষার্থীদের সাথে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগও রয়েছে শিক্ষক সোনা মিয়ার বিরুদ্ধে।

অভিযোগের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ সোনা মিয়া বলেন, একজন আইনজীবী একই সাথে চাকুরী করতে পারেন কোন সমস্যা নেই। বার কাউন্সিলের বিধি ও একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর বক্তব্যের বিষয়ে জানালে তিনি এই প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। কলেজের পাবলিক পরীক্ষায় কাঁচা রশিদে টাকা আদায় ও কলেজ ফান্ডে জমা না দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খাতা কলম এবং উন্নয়নমূলক কাজে এই টাকা ব্যয় করেছেন তাই কলেজ ফান্ডে জমা দেননি। তবে কি কি উন্নয়নের কাজে এই টাকা ব্যবহার করেছেন তা তিনি বলতে পারেননি।

নিয়োগ বাণিজ্য, বরখাস্থ শিক্ষককে টাকার বিনিময়ে পুনর্বহাল, গ্রামের বাড়ীতে রাজপ্রাসাদ, ২য় স্ত্রীকে ৩০ ভরি সোনা উপহার ও রাজধানীতে আলীশান ফ্লাটে ভাড়া থাকার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। এমন কোন ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি জানান।

জানতে চাইলে ফেডারেল মেডিক্যাল কলেজের সভাপতি ও ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ভাস্কর দেবনাথ বাপ্পি জানান,  "বিষয় খুব সিরিয়াসলি দেখা হবে, খুব তাড়াতাড়ি একটা বৈঠক ডাকা হবে। তিনি বলেন, টাকা পয়সার বিষয় টা খুব সেন্সেটিভ, এটাতে অভিযোগের প্রমাণ পেলে ছাড় দেওয়া হবে না। নারী কেলেঙ্কারির বিষয় টি যদি সত্য হয়ে থাকে আমি তার তীব্র নিন্দা জানাই, আর এটা সরাসরি ক্রিমিনাল অফেন্স। অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের চেয়ারম্যান ডাঃ দিলিপ কুমার রায় এর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

আমাদের বাণী/বাংলাদেশ/১০/১২/২০২১

আগামীনিউজ/এনইউ