যশোর ও কিশোরগঞ্জে নৌকা পেলেন হত্যা মামলার আসামি

সারাবাংলা ডেস্ক ডিসেম্বর ৭, ২০২১, ১০:২৫ এএম

যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা শ্রমিকলীগের শ্রম ও কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সেলিম রেজা পান্নু। এছাড়া কিশোরগঞ্জের ভৈরবে হত্যা মামলার প্রধান আসামি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। মনোনয়ন পেয়ে তিনি এলাকায় প্রচার-প্রচারণাও চালাচ্ছেন। তবে পুলিশ বলছে, তার গ্রেফতারি পরোয়ানা থানায় আসেনি। 

জানা যায়, যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা শ্রমিকলীগের শ্রম ও কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সেলিম রেজা পান্নু। তিনি মৎস্য ব্যবসায়ী ইমরোজকে কুপিয়ে হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।

এমন অভিযোগ তুলে মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সোমবার প্রেসক্লাব যশোর মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ওই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ৭ নেতা। পরে একই স্থানে সেলিম রেজা পান্নুর পক্ষে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার অনুসারীরা। তাদের দাবি সেলিম রেজা পান্নু দলের নিবেদিত কর্মী। দলের এক শ্রেণির ষড়যন্ত্রকারীরা তার মনোনয়ন ছিনিয়ে নিতে নৌকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

সেলিম রেজা পান্নুর বিরুদ্ধে হত্যা, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চাঁচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ওয়াজেদ আলী মোড়ল। 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের মনোনয়নের ব্যাপারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের যে নামের তালিকা পাঠানো হয় তাতে সেলিম রেজা পান্নুর নাম উল্লেখ ছিলো না। কে বা কারা তার নাম প্রস্তাব করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডে পাঠিয়েছে। এই ইউনিয়নের অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকে উপেক্ষা করে সেলিম রেজা পান্নুকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা দেয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, সেলিম রেজা পান্নু ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই চাঁচড়া এলাকায় মৎস্য ব্যবসায়ী ইমরোজকে কুপিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এর বাইরেও অস্ত্র ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অবিলম্বে তার মনোনয়ন বাতিল করে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নৌকা প্রতীক দেয়ার দাবি জানানো হয়।

অপরদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রেসক্লাবে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন সেলিম রেজা পান্নুর অনুসারীরা। প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চাঁচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আজাহার আলী মোল্লা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সেলিম রেজা পান্নু আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিত কর্মী। তিনি জেলা শ্রমিকলীগের শ্রম ও কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক। দলীয় সাংগাঠনিক কর্মকাণ্ড ও করোনাকালীন ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের পাশে থেকে বিশেষ ভূমিকা রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে নৌকা প্রতীক দিয়ে সম্মানিত করেছেন। এখন এক শ্রেণির ষড়যন্ত্রকারী তার মনোনয়ন ছিনিয়ে নিতে নৌকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

এদিকে, কিশোরগঞ্জের ভৈরবে হত্যা মামলার প্রধান আসামি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। মনোনয়ন পেয়ে তিনি এলাকায় প্রচার-প্রচারণাও চালাচ্ছেন। তবে পুলিশ বলছে, তার গ্রেফতারি পরোয়ানা থানায় আসেনি। 

তিনি হলেন উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও মৌটুপি গ্রামের মৃত আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে সাফায়েত উল্লাহ (৪৮)। এবারও তিনি পেয়েছেন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন। তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।

জানা গেছে, গত ২৫ নভেম্বর তিনি চেয়ারম্যান পদে তার মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আগামী ২৬ ডিসেম্বর ভৈরবে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের পর এলাকায় প্রচার-প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত।

সাদেকপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মানিক হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি সাফায়েত। ওই মামলায় গত ২৯ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন কিশোরগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক। 

নিহত মানিক ভূইঁয়ার ছেলে ও মামলার বাদী মো. সুজন মিয়া বলেন, আমার বাবাও দলের একজন নেতা ছিলেন। তাকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহ। দলের একজন নেতা হত্যা মামলার প্রধান আসামিকে কেমন করে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীক দিয়েছে তা আমি মানতে পারছি না। আদালত এখন তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। কিন্ত পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না। সে প্রকাশ্যে এলাকায় প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে। 

সাদেকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ফজলুল হক জানান, নিহত মানিক আমার চাচাত ভাই। মানিকও দলের একজন নেতা ছিল। তার খুনের মামলায় সাফায়েত প্রধান আসামি। অথচ দলের মনোনয়ন বোর্ড তাকে কী করে নৌকা প্রতীক দিল? আমিও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলাম। ডেলিগেট ভোটে আমি প্রথম হয়েছি কিন্ত আমি মনোনয়ন পেলাম না। খুনের আসামি পেল মনোনয়ন। 

এ বিষয়ে কথা হলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা প্রলয় কুমার সাহা জানান, কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলে নির্বাচনে প্রার্থিতায় তার বাঁধা নেই। জেলে থেকেও সে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে। তবে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না।

এ ব্যাপারে কথা বলতে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহ’র ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করেও সংযোগ স্থাপন করা যায়নি। তার ফোনটি বন্ধ রয়েছে।

ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম মোস্তফা (পিপিএম) জানান, আমি কয়েকদিন হলো ভৈরব থানায় যোগদান করেছি। সাফায়েত উল্লাহর গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়টি আমি জানি না। এ বিষয়ে খোঁজ নেব। আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা থানায় পৌঁছাতে কয়েক দিন সময় লাগে। থানায় পরোয়ানা এলে আমি আইনগতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

আগামীনিউজ/বুরহান