অভাবে পড়ে বাধ্য হয়েই কম মজুরিতে শ্রম দিচ্ছেন ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাঁওতাল সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষেরা। ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে একই পরিমাণ কাজ করে দিন শেষে পাচ্ছেন অর্ধেক পারিশ্রমিক। দিনে ৯ ঘণ্টা কাজ করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পুরুষ শ্রমিকেরা পান ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। নারীরা পান ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এ ক্ষেত্রে অন্য সম্প্রদায়ের শ্রমিকেরা পান ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।
জানা গেছে, রাণীশংকৈল উপজেলার ৩৫টি আদিবাসী গ্রামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রায় ৪ হাজার নারী-পুরুষের বসবাস। ধান রোপণ, কাটা-মাড়াইয়ের সময় ছাড়া অন্য সময়গুলোতে তাঁরা অনেকটা কর্মহীন থাকেন। সে সময় বাধ্য হয়েই আগাম শ্রম বিক্রি করেন। অন্য দিকে উচ্চশিক্ষা নিয়েও চাকরি না পেয়ে অন্যের জমিতে শ্রম বিক্রি করছেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অনেক শিক্ষিত তরুণ-তরুণী।
উপজেলার বলিদ্বারা, তেঘড়িয়া, শিয়ালডাঙ্গী,হাটগাঁও, রাঙ্গাটুঙ্গি, লোলদিঘী, সিন্দূরপুর, বালিয়াদিঘী, রাউতনগর উত্তরপাড়া, বিরাশি, বাজেবকসা, সুন্দরপুরসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় উন্নতির ছোঁয়া লাগলেও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাঁওতাল সম্প্রদায়ের লোকজন অনেক পিছিয়ে। দু’একজন বাদে সবারই বসবাস মাটির ঘরে ঝুপড়িতে
নন্দুয়ার ইউনিয়নের রাঙ্গাটুঙ্গি গ্রামের নব্বই ঊর্ধ্ব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সুন্দর মুর্মু বলেন, ‘একটা সময় ছিল কৃষি ও গৃহস্থের কাজ আমাদের ছাড়া হত না। এখন অন্য সম্প্রদায়ের মানুষেরা এ কাজে সম্পৃক্ত হওয়ায় আমাদের চাহিদা কমে গেছে। আর মজুরি বৈষম্যে কারণে আমাদের আজ নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা।’
হাটগাঁও ঝরেপড়া শিক্ষার্থী রতন মুর্মু বলেন, ‘আমাদের দু’বেলা খাবার জোটে না। অর্থাভাবে পড়ালেখা বন্ধ হয়েছে। বাবা-মা অন্যের জমিতে সারা দিন কাজ করেন। অন্য জনগোষ্ঠীর শ্রমিকেরা জনপ্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মজুরি পেলেও আমার বাবাকে দেওয়া হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। আর মা পান ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।’
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য হরিমোহন পাহান ও সামুয়েল হেমরম জানান, তাঁরা ধান রোপণ ও কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করেন। আগেরমতো কাজ না থাকায় কমমূল্যে আগাম শ্রম বিক্রি করে অনেক কষ্টে দিন পার করছেন বলে জানান তাঁরা।
আদিবাসী সানজিনা সরেন ও বাহামনি মুর্মু জানান, সকালে ঘরের কাজ শেষ করে দুপুরের খাবার সঙ্গে নিয়ে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অন্যের জমিতে কাজ করেন। অন্য জনগোষ্ঠীর শ্রমিকেরা একই পরিমাণ কাজ করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের তুলনায় বেশি মজুরি পান।
স্থানীয় কৃষক গোলজার হোসেন বলেন, ‘আমরা কষ্ট করে ফসল ফলাই। কিন্তু বাজারে ফসলের ন্যায্যমূল্য পাই না। লোকসান মেটাতে কম খরচে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারী শ্রমিকদের দিয়ে ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা মজুরিতে কাজ করানো হয়।’
রাণীশংকৈল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী প্ল্যাটফর্মের সভাপতি গোপাল মুর্মু সূগা বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে শ্রম বিক্রি করেন। এরপরও তারা মজুরি বৈষম্যের শিকার হন। মজুরি বৈষম্য দূর করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
আগামীনিউজ/নাসির