কুড়িগ্রামঃ কুড়িগ্রামের ৪০ চরাঞ্চলের নানা সুবিধাবঞ্চিত মানুষরা আলোকিত হল বিদ্যুতের আলোয়। এ যেন নানামুখী উন্নযনের স্বপ্ন বাস্তবতার আলোকে ধরা দেয়া। কল্পনার অতীতে থাকা বিদ্যুৎ পেয়ে উচ্ছ্বসিত চরবাসী।
আমরা চর এলাকায় বহু বছর থেকে বসত করে আসছি কোনদিন বিদ্যুৎ পাইনি। ভাবছিলাম এ জীবনে বিদ্যুৎ আসবে না। সরকার যেহেতু চরে বিদ্যুৎ দিয়েছে এখন আমরা কল্পনায় করতে পারছি না। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চর গ্রামের জুঁই বেগম।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ পেয়ে আমরা স্বার্থক হয়েছি। আমাদের চরের প্রতিটা বাড়িতে এখন বিদ্যুতের আলো জ¦লছে। ডিসের লাইনে টেলিভিশন দেখতে পারছি। বিভিন্ন প্রকার ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছি।
তবে এখানে একটা সমস্যা আছে এখন নদী ভাঙ্গন। নদী ভাঙ্গন রোধ করা গেলে আর সরকারের কাছে আমাদের কোন প্রকার চাওয়া পাওয়া নাই।
ওই গ্রামের শরিফা বেগম জানান, আমরা চর এলাকায় ছোট থেকে বড় হয়েছি কখনো স্বপ্নে ভাবি নাই বিদ্যুৎ পাব। শেষ বয়সে এসে বিদ্যুৎ পেলাম।গত ১৫ দিন থেকে বাড়িতে বিদ্যুতের আলো জ¦লছে।ভালোই লাগছে।কিন্তু কতদিন এই বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবো আল্লাই জানে।কারন প্রতি বছর নদী ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি এপার থেকে ওপারে যেতে হয়। দুপারই ভাঙ্গে আমাদের কি হবে?
কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লি বিদ্যুৎ অফিস সুত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রামের প্রত্যান্ত অঞ্চলের ৪০টি গ্রামে ১৮টি সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে নদীর তলদেশ দিয়ে ৪শ কিলোমিটার লাইনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এতে সরকারের ব্যয় ধরা হয়েছে ১শ ২৯ কোটি টাকা। সরকারের এত টাকা ব্যয়ে বিদ্যুৎতের আলো পেয়ে খুশি হয়েছে এসব চরের বাসিন্দারা।
জানা যায়, কুড়িগ্রামে জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ফুলকুমারসহ ১৬ টি নদ-নদীর অববাহিকায় সাড়ে ৪ শতাধিক চরাঞ্চল রয়েছে। এসব চরাঞ্চলে প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। এসব চরের বেশিরভাগ মানুষ এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়েছে।
জেলার বিভিন্ন দপ্তরে উন্নয়ন হলেও নদী ভাঙ্গন রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা না থাকায় এবং প্রতিবছর বন্যায় যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতি হওয়ায় সেখানকার মানুষের জীবন-মান উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে।
নদী ভাঙ্গনের বিষয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, চরাঞ্চলে আমাদের কোন কার্যক্রম নেই।
কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার খাদেমুল ইসলাম বলেন, এই সমিতির আওতায় ইতোমধ্যে গ্রিডভুক্ত এলাকায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পূর্ণ করেছি। অফ গ্রিডভুক্ত এলাকায় বিদ্যুতায়নের জন্য কুড়িগ্রাম লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় চরাঞ্চলের প্রায় ৪০টি গ্রামে নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই মুজিব বর্ষে চরাঞ্চলে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ সমাপ্তির আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
আগামীনিউজ/শরিফ