গাইবান্ধাঃ আগামী ২৮ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জেলার সুন্দরগঞ্জে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের চাপে টালমাটাল হয়ে পড়েছে নৌকার মনোনীত প্রার্থীরা। জাতীয় পার্টির দূর্গ হলেও সবক’টি ইউনিয়নে প্রার্থী দিতে পারেনি দলটি। তবে আওয়ামী লীগের চেয়ে কিছুটা চাঙা অবস্থানে রয়েছে জাপার প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও জাপার দুর্বলতায় ফুরফুরে হাওয়া বইছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মাঝে। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ঘুরে ভোটার, সমর্থক ও নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হবে ইউপি নির্বাচন। ১৩টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী, ১১ টিতে জাপার মনোনীত প্রার্থী, ১টি করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাসদ ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থীসহ চেয়ারম্যানপদে ৯৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। সংরক্ষিত মহিলা সদস্যপদে ২১৮ জন ও সাধারণ সদস্যপদে ৫৬৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এরমধ্যে ৭টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ৭জন বিদ্রোহী রয়েছেন। ১৩ টি ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্র আছে ১২৬টি। মোট ভোটার সংখ্য ৩ লাখ ১০ হাজার ৩০৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৫২ হাজার ৮৪৩ ও নারী ভোটার ১ লাখ ৫৭ হাজার ৪৬০ জন।
গত নির্বাচনে ১৩টি ইউপির মধ্যে আওয়ামী লীগের ৫জন, বিএনপির ৩ জন, জামায়াতের ৩ জন, জাপার ১ জন ও স্বতন্ত্র থেকে ১ জন নির্বাচিত হয়েছিল।
বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নজমুল হুদা বলেন, ‘মানুষের ভালোবাসা আমার পাশে সব সময় আছে। ২৮ তারিখ মানুষ যেন সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে প্রশাসনসহ সবার কাছে অনুরোধ করছি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ী হব ইনশাআল্লাহ।’
আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে সোনারায় ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে চশমা প্রতীকে লড়ছেন সৈয়দ বদিরুল আহসান সেলিম। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার আমি। ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও আমাকে মনোনয়ন দেয়নি। দল আমাকে মনোনয়ন দেননি তো কি হয়েছে। এলাকায় আমার ভোট আছে। জনপ্রিয়তা আছে। মানুষের সেবা করে যাচ্ছি। ভোটারদের চাপেই নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। জয় হবেই আমার ইনশআল্লাহ।’
বেলকা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মজিবর রহমান মজি বলেন, ‘মনোনয়ন বঞ্চিত জহুরুল হক সরদার বিদ্রোহী প্রার্থীর ব্যানারে নির্বাচন করছেন। এটা আমার সাথে নয় বরং তিনি বিরোধীতা করছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে। উনি নৌকা পেলে আমি ওনার হয়ে কাজ করতাম। কিন্তু উনি সেটা না করে নৌকাকে হারিয়ে দিতে আমার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। সে কারণে তাকে দল থেকে বহিস্কারও করা হয়েছে। তারপরেও তিনি নির্বাচনী মাঠে আছেন। এতে কিছুটা হলেও নৌকা তথা আমার বিজয়ে বাঁধা হচ্ছে।’
জাতীয় পার্টির উপজেলা সাধারণ সম্পাদক আঃ মান্নান জানান, ‘আমরা মহাজোটের শরীক দল। যদিও স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় তেমন কোন পড়ে থাকে না। তারপরও কিছুটা হলে আওয়মী লীগকে সমর্থন দিতে ওই দুই ইউনিয়নে প্রার্থী দেয়নি জাতীয় পার্টি।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম সরকার লেবু বলেন, ‘সব ইউনিয়নে নয় কয়েকটি ইউনিয়নে নির্বাচনী মাঠে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের অবস্থান কিছুটা শক্তিশালী ছিল। তবে দিন দিন তাদের শক্তি কমে যাচ্ছে। তাদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণাও কমে যাচ্ছে। আশা করছি তারা ধীরে ধীরে দূর্বল হয়ে পড়বেন। ইতিমধ্যে বিদ্রোহী সাত প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। ফলে নেতা-কর্মীরা তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার কারণে কয়েকটি ইউনিয়নে নৌকা হেরে যেতে পারে।’
আগামীনিউজ/বুরহান