ভাঙা সেতু পারাপারে নড়েবড়ে সাঁকোই ভরসা চার গ্রামের মানুষের

আনোয়ার হোসেন আকাশ, রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি নভেম্বর ২১, ২০২১, ০৪:২৪ পিএম
ছবি: আগামী নিউজ

ঠাকুরগাঁও: জাতীয় বা স্থানীয় নির্বাচনে শুরু হয় নেতা-কর্মীদের আনাগোনা। সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন তাঁরা। পরে আর দেখা মেলে না তাঁদের। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সাঁকো দিয়েই পারাপার হচ্ছে ৪ গ্রামের মানুষ।

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার জিগা গ্রামের নানানদহ খালের উপর নির্মিত সেতুটি সংস্কারের অভাবে দীর্ঘ চার বছর যাবৎ অকেজো হয়ে পড়ে আছে।

ভোগান্তি নিরসনে এলাকাবাসীর নিজ উদ্যোগ ও অর্থায়নে নির্মাণ করা হয় কাঠের সাঁকো। এই ঝুঁকিপূর্ণ ভাঙা সেতুর দুইপাশে কাঠের সাঁকো দিয়ে পারাপার করতে হচ্ছে চার গ্রামের সাধারণ মানুষকে। এভাবে পারাপার করা যেমন ঝুকিপূর্ণ, তেমনি ভোগান্তিও রয়েছে। সেতুতে উঠলেই সেতুটি নড়েচড়ে ওঠে। ইতিমধ্যে কয়েকজন পানিতে পড়েও গিয়েছে।

চার গ্রামের মানুষ ৪ বছর থেকে এভাবেই চলাচল করছে। চার বছর ধরেই সেতুটি ভেঙে পড়ে আছে।

নতুন সেতু নির্মাণ কিংবা সংস্কারের জন্য কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।   সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর দুই পাশ ভেঙে কাত হয়ে আছে। দুই পাশের ভাঙা অংশে বাঁশের খুঁটির ওপর কাঠ বিছিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উপজেলার ভাতুরিয়া ইউনিয়নের জিগা গ্রামের নানানদহ খালের ওপর নড়বড়ে কাঠের সাঁকোর চিত্র এটি।

এরই মধ্যে সাঁকোটির বাঁশ-কাঠ নষ্ট হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবুও উভয় পাড়ের মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে ছুটে চলেছে এপার থেকে ওপারে। শুধু সাধারণ মানুষই নয়, স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদেরও একমাত্র ভরসা ওই সাঁকো। বর্তমানে ভাঙাচোরা এই সাঁকো দিয়ে চলতে গিয়ে হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা।

সেতুর এক পাশে মাগুড়া, বহুতি, জিগা ও মুলকান গ্রাম। এই চার গ্রামের মানুষ চৌরঙ্গী বাজার, কাঁঠালডাঙ্গী বাজার ও যাদুরনিহাটে যাওয়ার জন্য এ সেতু ব্যবহার করে। কিন্তু সেতু দিয়ে ভারী কোনো ভ্যান বা অন্য যানবাহন যাওয়া সম্ভব নয়। তাই ওই গ্রামের মানুষদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিতেও চার কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে নানানদহ খালের ওপর ৫০ ফুটের দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এরপর ২০১৭ সালের আগস্টের বন্যায় ওই সেতুর দুই পাশ দেবে গিয়ে ভেঙে যায়।

স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দা তফিজুল হক বলেন, সেতুর জন্য কতজনকে বলা হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তাই গ্রামবাসী নিজেরা চাঁদা তুলে কাঠ ও বাঁশ বিছিয়ে জোড়াতালি দিয়েছে।

মাগুরা গ্রামের পথচারী আব্দুর রহিম মিয়া বলেন, বিশেষ প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থানে ছুটতে হয় এই ভাঙা সাঁকোর ওপর দিয়ে। এখানে সেতু নির্মাণ করা হবে, দীর্ঘদিন ধরে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছেন জনপ্রতিনিধিরা। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি সেই প্রতিশ্রুতির। এ স্থানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, আশপাশের চার গ্রামের মানুষ এ সেতু দিয়ে পণ্য পরিবহন করত। কিন্তু সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় গ্রাম থেকে শহরে ধান, চাল ও কৃষিপণ্য যানবাহনে পরিবহন করা যাচ্ছে না। এতে করে গ্রামের কৃষক অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। দুই পাশের হাটে মালামাল নিয়ে যেতে হলে কমপক্ষে চার কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয়। অসুস্থ ব্যক্তি ও রোগীদের হাসপাতালে যেতেও অনেক সমস্যা হয়।

ভাতুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহাজাহান জানান, সেতুটি নতুন করে নির্মাণ করা খুবই জরুরি। বিষয়টি নিয়ে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান ও প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলবেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) হরিপুর উপজেলা প্রকৌশলী মাসুদার রহমান বলেন, ‘আমি সবে হরিপুর উপজেলায় বদলি হয়ে এসেছি। সেতুর বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে।’

হরিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান জানান, এখানে নতুন সেতু নির্মাণের জন্য তদবির করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন একটি সেতুর কাজ শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আগামীনিউজ/ হাসান