দেবীগঞ্জ (পঞ্চগড়): দেবীগঞ্জে হলুদের বাম্পার ফলন।রান্নাঘরে হলুদ, বিয়ে বাড়িতেও হলুদ। হলুদ মিশে আছে বাঙালির খাদ্যাভ্যাস ও সাজগোজের সংস্কৃতিতে।অর্থনৈতিক দিক থেকেও হলুদ চাষ লাভজনক। এ কারণে পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলায় অনেক চাষি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হলুদ চাষ করে সফল হচ্ছেন। বিশেষত পতিত জমিতে হলুদ চাষ করে ভাগ্য ফিরিয়েছেন অনেকে।চলতি মৌসুমে দেবীগঞ্জে হলুদের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় উৎপাদিত হলুদের ফলন হয়েছে বেশ।
সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার ভূমি উঁচু থাকায় এই এলাকাগুলোতে, হলুদ,আদা , পেয়াজ, রসুন, মরিচ সহ প্রায় সব ধরনের ফসল উৎপাদন করা যায়।তাই দেবীগঞ্জের কৃষকেরা লাভজনক ফসল হিসেবে হলুদ উৎপাদন করে থাকে।হলুদ খরিপ মৌসুমে রোপণ করা হয়। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত রোপণ করা ভাল। তবে মে মাসেও রোপণ করা যায়। রোপণের প্রায় ৯ থেকে ১০ মাস পর ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে গাছের পাতা শুকিয়ে যায়। তখন পাতা কেটে তার ১০ থেকে ১২ দিন পর হলুদ সংগ্রহ করতে হয়। হলুদের রয়েছে নানা গুণ। ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে হলুদের কোনো জুড়ি নেই।খালি পেটে কাঁচা হলুদের রস খেলে রক্ত পরিষ্কার হয়। দুরারোগ্য ক্যানসার রোগ সারাতে হলুদ মশলাসমৃদ্ধ তরকারির ঝোল পথ্য হিসেবে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।
দেবীগঞ্জ উপজেলার রামগঞ্জ বিলাসী নগর পাড়া এলাকার চাষি ইব্রাহিম জানান, বিঘাপ্রতি সার ও বীজসহ খরচ হয় ৮/১০ হাজার টাকা। প্রতি মণ কাঁচাহলুদ বিক্রি হয় ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। হলুদ চাষে জৈব সার ব্যবহারে খরচ হয় কম। প্রতি বিঘা জমিতে ৫৫-৬০ মণ হলুদ উৎপাদিত হয়ে থাকে। এক বিঘা জমির কাঁচাহলুদ বিক্রি হচ্ছে ৪০/৪৫ হাজার টাকায়। দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়ন এলাকার চাষি শাজাহান আলী জানান, অনেক বছর ধরে হলুদ চাষ করছেন তিনি। আগে চাষ করতেন নিজ পরিবারের সারা বছরের চাহিদা মেটাতে। এখন তিনি হলুদ আবাদ করছেন ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে। এ বছর তিনি ২ বিঘা জমিতে হলুদ চাষ করেছেন। এর মধ্যে অনেক পতিত জমিও ছিলো। তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই হলুদ চাষে এগিয়ে এসেছেন।
দেবীগঞ্জ কৃষি অফিসার সাফিয়ার রহমান বলেন, দেবীগঞ্জে এবার বাণিজ্যিকভাবে প্রায় ৫৩০ হেক্টর জমিতে হলুদ চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও হয়েছে ভালো। তিনি জানান, বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হলুদ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। হলুদ চাষে যেমন ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হতে পারে তেমনি জাতীয় চাহিদা পূরণ করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। হলুদ চাষের জন্য একর প্রতি প্রায় ৮১০ থেকে ১২১৫ কেজি বীজের (মোথা) প্রয়োজন হয়। তবে ছড়া বীজ ব্যবহার করলে একর প্রতি ৬০০-৮০০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। সাধারণত ২৫ থেকে ৪০ গ্রাম ওজনের মোথা বীজ হিসেবে রোপণ করা দরকার। ভালো ফলনের জন্য গভীরভাবে ৪ থেকে ৫টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে এবং আগাছা পরিষ্কার করে ঢেলা ভেঙে ভালোভাবে জমি তৈরি করে নিতে হবে।
আগামীনিউজ/ হাসান