ঠাকুরগাঁওঃ আগামী ১১ নভেম্বর হতে যাওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে সরগরম ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল ও হরিপুর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা।
তবে ভোটের দিন যতই এগিয়ে আসছে, জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ততই বাড়ছে। বিএনপি নির্বাচনে প্রার্থী না দিলেও আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থীরা সুবিধাজনক স্থানে, এমনটি বলা যাচ্ছে না।
এর কারণ, বেশির ভাগ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগেরই নেতাকর্মীরা। এই বিদ্রোহী প্রার্থীরা নৌকার জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। কোথাও কোথাও নৌকার প্রার্থীরাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।
নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, রাণীশংকৈল উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ২০ জন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। আর হরিপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ৩০ জন। প্রার্থীরা এখন পথসভা, গণসংযোগ, মতবিনিময় শেষ করে ভোটারদের দরজায় ভোট প্রার্থনা করছেন।
তবে প্রতিটি ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকার বিপক্ষে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী লড়াই করছেন।
ফলে অনেক ইউনিয়নে নৌকার বিজয় নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিদ্রোহীদের সতর্কবার্তা এবং সর্বশেষ বিদ্রোহীদের বহিষ্কার করা হলেও খুব বেশি কাজে আসেনি। বরং অনেক স্থানে বিদ্রোহীদের চাপে প্রচার-প্রচারণায় গতি আনতে পারেনি সরকারি দলের প্রার্থীরা।
প্রতিটি ইউনিয়নে সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাউকে কাউকে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা সমর্থন দিচ্ছেন। এতে ভোটের দিনে সংঘর্ষ-সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কা করছেন ভোটাররা।
সম্প্রতি হরিপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নে দুই বিদ্রোহী প্রার্থী তাদের কর্মী-সমর্থক নিয়ে ঘোড়া ও চশমা মার্কার প্রার্থী ও তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালান। এরপর বিদ্রোহী প্রার্থী ও হরিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নজরুল ইসলাম ‘চশমা’ প্রতীকের নির্বাচনী কার্যালয় ও গাড়ি ভাঙচুর করেন ঘোড়া প্রতীকের কর্মী-সমর্থকরা।
এদিকে রাণীংকৈল ধর্মগড় ইউনিয়নে ৪ বিদ্রোহী প্রার্থীকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে নৌকার প্রার্থীকে। সেখানে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকিও দিচ্ছে। এই উপজেলাতেও দুটি ইউনিয়নে বিদ্রোহী ও নৌকার কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার মদদে নেকমরদ ইউনিয়নে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন এক স্বতন্ত্র প্রার্থী।
এ নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যান হানিফ হোসেন ও আ'লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আকবর আলী মাস্টার অভিযোগ করেন, নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কাশেম নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে সন্ত্রাসী ক্যাডার দিয়ে তার কর্মী ও ভোটারদের ওপর হামলা চালাচ্ছেন। তাদের কর্মী ভোটারদের ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন। রাতের আঁধারে পোস্টার ও ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে।
হরিপুর উপজেলার আমগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের নৌকা মার্কার প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান পাভেল তালুকদার অভিযোগ করেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী বিগত নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছিলেন। এবারও সেই ষড়যন্ত্র করছেন।
রাণীংশকৈল নেকমরদ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, বর্তমান নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নানা কারণে জনবিচ্ছিন্ন। যে কারণে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ও কেন্দ্র দখল করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাইছেন।
নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ধর্মগড় ইউপিতে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক রিপন। তিনি বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় সুষ্ঠু ভোট হওয়া নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
তবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির স্টিভ।
তিনি বলেন, নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকবে। কোনো প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে, আইনের ব্যত্যয় ঘটালে বা চেষ্টা করলে পুলিশ তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।