গাজীপুর: আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বেড়েই চলেছে। এ কারণে শিশুদের দৈহিক গঠনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। কাজের লোক হিসেবে শিশুদের দিয়ে করানো হচ্ছে ভারি এবং রিস্কি কাজ। জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন কর্মে নিয়োজিত দেশের লাখ লাখ শিশুর নীরব ক্রন্দন কেউই লক্ষ্য করছে না।
শুধু ক্ষুধার তাড়নায় অনেক শিশু ভিক্ষাবৃত্তির পথও বেছে নিচ্ছে। যে বয়সে একজন শিশুর স্কুলে যাওয়ার কথা, সহপাঠীদের সাথে হই-হুল্লোড় করে বেড়ানোর কথা যার, সেই বয়সে সংসারের হাল ধরে জীবন যুদ্ধ করে যাচ্ছে হৃদয় ও রিয়াদ নামের দুই শিশু। বয়স আর কত হবে ১০ কি ১১। এই বয়সে মানুষের ফেলনা কুঁড়িয়ে হৃদয়ের আয়ে চলছে তাদের সংসার। এভাবেই ঘুরছে হৃদয়ের জীবনের চাকা।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার এমসি বাজার এলাকায় বেপারী পাড়া মোতালেবের বাড়িতে মা-বাবা, ভাই-বোনের সাথে হৃদয় ভাড়া বাসায় বসবাস করে। পরিবারের বড় সন্তান সে। বয়স মাত্র ১০/১১ বছর। অভাবের সংসার তার। হঠাৎ বাবা অসুস্থ হওয়ায় ভারি কোনো কাজ করতে পারেন না। দিন-রাত উপজেলার চারিদিকে ঘুরে ঘুরে গ্রামের আনাচকানাচে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বোতল সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। মানুষের ফেলে দেওয়া পলিথিন-বোতল কুঁড়িয়েই চলে তার জীবন। আর এই অপ্রয়োজনীয় জিনিষ কুঁড়িয়ে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি পরোক্ষভাবে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে সহযোগিতা করছেন হৃদয় ও হৃদয়দের মতো অনেক শিশু শ্রমিক।
সরেজমিনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রঙিলা বাজার এলাকায় প্যাডেলে ভর করে পরিত্যক্ত বোতল কুঁড়াতে ছুটছেন। কথা হয় হৃদয়ের সাথে। সে জানায়,তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার বয়রা কান্দা গ্রামে। হঠাৎ বাবা অসুস্থ হওয়ায় সংসারের হাল ধরতে হয়েছে তাকে। হৃদয় আরো জানায়, প্রতিদিন তার আয় চার থেকে পাচঁশ’ টাকা। একদিন এসব পরিত্যক্ত সামগ্রী কুঁড়াতে না বের হলে সেদিন আয়-রোজগার বন্ধ থাকে।তবে এ কাজে হৃদয়ের জীবনের ঝুঁকি বাড়ছে। রয়েছে নানা সংক্রামক রোগসহ শ্বাসকষ্ট ও ক্যান্সারের মতো রোগের আশঙ্কা।
হৃদয়ের বাসার সামনে গিয়ে দেখা গেল, হৃদয়ের বাবা আল-আমীনকে দাঁড় করানো একটি ভ্যানে বসে রয়েছেন। তার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বস্তা, পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল আর ভাঙা প্লাস্টিক। কোথাও স্তূপ করে রাখা কাগজ। তিনি এই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জিনিষ সযত্নে পৃথক করছেন। কোনো বস্তায় প্লাস্টিকের বোতল, কোনোটিতে কাগজ, আবার কোনোটিতে প্লাস্টিকের ভাঙ্গা টুকরা। ঘরের সামনে স্তূপ করে রেখেছেন প্লাস্টিকের বোতল। সারাদিন উপজেলার এদিক-সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই পরিত্যক্ত জিনিষগুলো হৃদয় কুঁড়িয়ে আনেন। বিকালে বস্তাবন্দি করে রাখেন। এই কাজে তাকে সহযোগিতা করে তার বাবা আলা- আমীন ও ছোট বোন রত্না (৫)। প্লাস্টিকের বোতলগুলো বাছাই করার পর প্লাস্টিক ফ্যাক্টরিতে নিয়ে বিক্রি করেন হৃদয়। সেখানে এগুলো গলিয়ে তৈরি করা হয় প্লাস্টিকের বিভিন্ন পণ্য।
সমাজকর্মী সাঈদ চৌধুরী বলেন, যে শিশুরা সংসারের হাল ধরতে বাধ্য হচ্ছে তাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকেই পার্ট টাইম নিরাপদ কাজের ব্যবস্থা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ছিন্নমূল শিশুদের কুটির শিল্প, কম্পিউটারের সাধারণ কাজগুলো, কাগজের শিল্প তৈরীর মত নিরাপদ কাজগুলো শেখানো গেলে তাদের মনন যেমন বাড়বে তেমনি তারা কাজের পাশাপাশি শিক্ষায়ও মনোযোগ দিতে পারবে। তাছাড়া সমাজের প্রতিষ্ঠিত মানুষদেরও এদের জন্য এগিয়ে আসতে হবে ।
আগামীনিউজ/ হাসান