রাজশাহীতে নারী প্রতারক চক্রের চার সদস্য গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২, ২০২১, ১০:২৫ পিএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

রাজশাহীঃ মহানগরীতে নারী দিয়ে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়ে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তাকে অপহরণের পর প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজির অপরাধে প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। এ সময় গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া নগদ ৪৫ হাজার টাকা ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৪টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।

সোমবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানাধীন বহরমপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হলেও মঙ্গলবার (২ অক্টোবর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে, রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানাধীন বহরমপুর এলাকার মো. মামুনুর রহমান বাবুর স্ত্রী মোসা. শরিফা আক্তার সাথী (২৭), বোয়ালিয়া মডেল থানাধীন হাদির মোড় নদীর ধার এলাকার মৃত দুলাল বিশ্বাসের ছেলে মোঃ পারভেজ (৩২), কাটাখালী থানাধীন সমসাধীপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের মো. গাজী সালাউদ্দিনের ছেলে মো. সায়েম উদ্দিন শ্যাম (৩৫) ও এয়ারপোর্ট থানাধীন বায়া তেরিপাড়া গ্রামের মো. বাপ্পী হোসেনের স্ত্রী মোসা. রাজিয়া সুলতানা সুমা (৩০)। 

আরএমপির সদরদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, গত ৩১ অক্টোবর নাটোর থেকে মহানগরীর শিরোইল বাস টার্মিনালে নেমে বাড়ি যাওয়ার জন্য অটোরিক্সায় উঠেছিলেন সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত ল্যান্স কর্পোরাল (৫৬)। বর্তমানে সে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ডিজিএম-এর গাড়ি চালক হিসেবে কর্মরত। 

ওই সময় একই অটোরিক্সায় আরো দুইজন মহিলা যাত্রী উঠেন। কিছুক্ষণ পর ওই মহিলাদের মধ্যে একজন যাত্রী অবসরপ্রাপ্ত ল্যান্স কর্পোরালের হাতে ঠিকানা লেখা একটি চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে জানান তারা রাজশাহীতে নতুন এসেছে, কিছুই চেনেন না তাই ঠিকানা মোতাবেক পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। তখন ইকবাল সরল বিশ্বাসে গ্রেপ্তারকৃত এই দুই নারীকে ঠিকানা অনুযায়ী পৌঁছে দেওয়ার জন্য অটোরিক্সা নিয়ে ঐতিহ্য চত্বরে আসলে পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ি আরো দুইজন আসামি সেই অটোরিক্সায় উঠে। এবার তারা সকলে ইকবালকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে শরিফা আক্তার সাথীর বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে শরিফার সাথে ইকবালের জোরপূর্বক অশ্লীল ছবি তোলে। এরপর অপহরণকারীরা ইকবালের নিকট ৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ ও চাঁদা দাবি করে। আর টাকা না পেলে এ সকল অশ্লীল ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়। তখন ইকবাল তার সম্মানের ভয়ে ব্যাগে থাকা স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা তাদের হাতে তুলে দেয় এবং ছবিগুলো প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন। 

তখন অপহরণকারীরা বলে ঠিক আছে আজকে ছেড়ে দিলাম কালকে আরও এক লাখ টাকা নিয়ে আসবি। আর টাকা না আনলে কালকেই তোর ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দিব এবং তোর বসকেও দিয়ে দিব, যেন তোর চাকুরী না থাকে। এ ঘটনায় ইকবাল নিরুপায় হয়ে ডিবি পুলিশকে মৌখিকভাবে অভিযোগ প্রদান করেন। যে অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক চক্রের এই চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

আর গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ শেষে বিকেলে আদালতের মাধ্যমে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিশ্চিত করেছেন আরএমপির মুখপাত্র।

আগামীনিউজ/শরিফ