চট্টগ্রামঃ মেডিকেল কলেজে (চমেক) আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুরুতর আহত দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহাদী জে আকিবের (২১) জ্ঞান ফিরেছে। তিনি হাসপাতালের আইসিইউ বেডে এখন নড়াচড়া করছেন।
রোববার (৩১ অক্টোবর) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আকিবের চিকিৎসার তত্ত্বাবধানে থাকা স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেতা ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান।
তিনি বলেন, শক্ত কিছুর আঘাতে আকিবের মাথায় রক্ত জমাট বেঁধেছিল। অস্ত্রোপচার করে সেগুলো অপসারণ করা হয়েছে। দুপুরের পরে তার জ্ঞান ফিরেছে। কথাও বলেছে। অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে। তাকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হবে।
আকিব আহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার বাদী ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র তৌফিকুর রহমান বলেন, আকিবের অবস্থা উন্নতির দিকে। আজ তার লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলা হয়েছে। তার জ্ঞানও ফিরেছে। আকিবকে কোনো প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারছে। তবে তার পুরোপুরি সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে।
এর আগে চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এস এম নোমান খালেদ চৌধুরী বলেন, এখন আকিবের অবস্থা কিছুটা ভালো। আইসিইউতেই তার চিকিৎসা চলছে। মাথার ডান দিকে আঘাতে হাড় ভেঙে গেছে। দীর্ঘ সময় নিয়ে তার অপারেশন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আকিবের মাথার হাড়ের একটি অংশ বের করে পেটের মধ্যে রাখা হয়েছে। কিছুটা সুস্থ হলে হাড়ের অংশটি মাথায় প্রতিস্থাপন করা হবে। মাথার যে অংশে অপারেশন করা হয়েছে সেখানে এখন হাড় নেই। ওখানে যদি কেউ চাপ দেয়, তাহলে ব্রেনের ক্ষতি হবে। তাই ব্যান্ডেজে লিখে রাখা হয়েছে, ‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’। সবাইকেই সতর্ক করা হয়েছে। আশা করছি, আকিব পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে।
হাসপাতালে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আকিবের বাবা গোলাম ফারুক বলেন, আমার ছেলের জন্য সবাই দোয়া করবেন, যাতে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। মেডিকেলের ছাত্রদের আমি বলবো, তারা যেন রাজনীতির নামে নিজেরা মারামারি না করে।
এর আগে চিকিৎসাধীন আকিবের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ছবিতে আকিবের মাথায় ব্যান্ডেজ দেখা যায় এবং ওই ব্যান্ডেজের ওপর লেখা- ‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না।’
শুক্রবার রাতে ও শনিবার চমেক ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের জের ধরে চমেক অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর শিক্ষার্থীদের দ্রুত হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
সংঘর্ষে আকিবের আহত হওয়ার ঘটনায় ১৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার (৩০ অক্টোবর) রাতে পাঁচলাইশ থানায় মামলাটি দায়ের করেন কলেজের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র তৌফিকুর রহমান। পাঁচলাইশ থানার ডিউটি অফিসার এসআই সোহেল রানা এ তথ্য জানান।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মারধরের একপর্যায়ে আকিবের মাথায় আঘাত করা হয়েছে। আকিবকে হকিস্টিক ও বোতল দিয়ে আসামিরা আঘাত করেছে।
চমেক সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষে জড়ানো একটি পক্ষ চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন ও আরেকটি পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়। আহত আকিব মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী বলে জানা গেছে।
আগামীনিউজ/বুরহান