ঢাকাঃ ছেলেবেলায় ক্লাস এইট পর্যন্ত পাশাপাশি বেঞ্চে বসেই নিয়মিত ক্লাস করেছেন দুই বন্ধু। তাদের একজন পড়াশোনা শেষে হয়েছেন দেশসেরা চিকিৎসক, রাজনীতিতে জড়িয়ে হয়েছেন সাংসদ, বসেছেন মন্ত্রীর চেয়ারে। আরেকজন ভাগ্যের ফেরে পড়াশোনার ইতি টেনে সুইপার পদে চাকরি নেন সেই কিশোর বয়সেই।
তবে মন্ত্রী হয়েও ভুলে যাননি ছেলেবেলার খেলার সাথীকে। এত বছর পরে দেখা হতেই বুকে টেনে নিয়েছেন বন্ধুকে।
বলছি, সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান ও তার ছেলেবেলার বন্ধু রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুইপার ছিতুয়ার কথা।
রাষ্ট্রীয় সফরে রংপুরে গিয়ে পুরনো বন্ধুকে দেখে পতাকাবাহী গাড়ি, পুলিশ প্রটোকল সব ভুলে বন্ধুত্বের আবেগ আর অতীতের দুরন্তপনার দিনগুলো স্মৃতির ঝাঁপি খুলে জ্বলজ্বলে হয়ে উঠে মন্ত্রীর চোখের সামনে।
কিন্তু বন্ধুর এই জাঁকজমক দেখে ছিতুয়া ছিলেন প্রচণ্ড আড়ষ্ট। ব্যস্ত ছিলেন নিজেকে আড়াল করার চেষ্টায়। আর সেটা বুঝতে পেরেই জনারণ্যের মাঝ থেকে ‘এ্যাই ছিতুয়া’ বলে ডেকে উঠলেন। দৃষ্টি বিনিময় হতেই বন্ধুকে বুকে টেনে নিয়ে বুক ফুলিয়ে গর্বের সাথে বললেন, এই ছিতুয়াই আমার স্কুলের বন্ধু। ছিতুয়ার তখন ছল ছলে চোখ। অশ্রুবিন্দু তখন স্মৃতির মণিমুক্তা হয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে দুই বন্ধুর নয়ন।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচ্ছন্নতাকর্মী (সুইপার) থেকে সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন ছিতুয়া। তার স্ত্রী গীতা রানী এখনও সুইপার।
প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামের বাবা মরহুম আক্তারুজ্জামান খান ছিলেন এই অফিসেরই উচ্চমান সরকারী, আর ছিতুয়ার মা চানিয়া রানী ছিলেন সুইপার। সেই থেকেই দুজনের বন্ধুত্ব। একসাথে পড়েছেন রংপুরের রবার্টসনগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে।
বন্ধুর সঙ্গে দেখা হওয়ার এই ঘটনা ছবি তুলে ডা. এনাম পোস্ট করেছেন তার ব্যাক্তিগত ফেসবুক একাউন্টে। সেই স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, 'তখন ছিল স্বর্ণালী যুগ। আমরা যে মূল্যবোধে বেড়ে উঠছিলাম, সেখানে জাতপাতের কোন বালাই ছিল না।
আরো অন্যান্য বন্ধুদের মতো ছিতুয়াও ছিল আমার দুরন্ত শৈশব আর কৈশোর অসাধারণ এক বন্ধু। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আমাদের সঙ্গেই ছিল ছিতুযা। তারপর পড়াশোনায় সে ইস্তফা দিলেও আমাদের বন্ধুত্বে ভাটা পড়েনি কখনো।
আহারে জীবন। আমার সোনালি অতীত। সোনালি কৈশোরের কত শত স্মৃতিমাখা এই রংপুর। আজ ছিতুয়া ঝাপসা করে দিচ্ছে আমার চোখ দুটো।
জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে কৈশোরের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিগুলো একদিকে যেমন আনন্দের, অন্যদিকে অনেক কষ্টের। সেই আনন্দ আর কষ্টের মিশেলে ভিন্ন এক অনুভূতি আজ উপহার হিসেবে তুলে দিয়েছে আমার বন্ধু ছিতুয়া।
আমার বন্ধুদের অনেকেই দেশবরেণ্য চিকিৎসক, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট জেনারেল, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিবসহ আরো কত কি! ছিতুয়া অবশ্যই তাদের তুলনায় কম কিছু নয়।
বন্ধু মানে আস্থা-নির্ভরতা। বন্ধু মানে ভালোবাসা, যেখানে থাকে না কোনো স্বার্থ। গাড়ির পতাকা, প্রটোকল, পদ-পদবী, সামাজিক অবস্থান এগুলো সবকিছুই সাময়িক। কিন্তু বন্ধুত্বের বন্ধন চিরদিনের। ছিতুয়া বন্ধু আমার। তোর জন্য ভালোবাসা।’