নরসিংদীঃ জেলাতে ছাত্রদলের সর্বশেষ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক পেলেন নৌকা প্রতীক। এখন তিনি জেলার রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী হয়েছেন। বর্তমানে তিনিই ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ২০১২ সাল পর্যন্ত মেয়াদে বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই কমিটির পর ছাত্রদলের আর কমিটি হয়নি। ২০১৮ সালে তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন।
কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও নরসিংদী-৫ আসনের সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ আশরাফকে নৌকার মনোনয়ন দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করে। তৃণমূল থেকে পাওয়া সেই সুপারিশের ওপর ভিত্তি করেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড থেকে রবিবার (১০ অক্টোবর) আশরাফকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়।
আশরাফের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হকও ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। তার শ্বশুর মকবুল হোসেন চরমধুয়া ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান সহ-সভাপতি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাবা ও ছেলের কর্মীদের হাতে বাঁশগাড়ি ইউনিয়নসহ উপজেলার আওয়ামী লীগ একাধিক নেতাকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। সেই কারণে ছাত্রদল নেতা আশরাফকে নৌকা প্রতীক দেওয়ায় মাঠ পর্যায় থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জোট সরকারের মেয়াদে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতন করা আশরাফের নাম কেন্দ্রে পাঠানোর বিষয়টি জানতে পেরে গত ৫ অক্টোবর লিখিতভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল মিয়া। অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ আর নৌকা করে জীবন পার করলাম। বিএনপির আমলে হামলা মামলার শিকার হলাম। কিন্তু আমরা নৌকা প্রতীক পেলাম না, পেলেন ছাত্রদলের সাবেক নেতা। কেন্দ্রে লিখিতভাবে জানানোর পরেও ফল হয় নাই।
রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইমান উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কেন্দ্রে তালিকা পাঠানোর সময় আশরাফুল হকের নামের পাশে অনুপ্রবেশকারী লিখেই স্বাক্ষর দিয়েছিলাম। গত উপনির্বাচনে এমপি রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডে একক প্রার্থী হিসেবে আশরাফুলের নাম পাঠিয়েছিলেন। ওই সময় আমি এ (ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক) পদে ছিলাম না। এবারও এমপি চাইছে, তাই তার নাম লিস্টে ১ নম্বরে দিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। তার পর মনোনয়ন বোর্ড সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এখন দল চাইলে প্রতীক বহালও রাখতে পারে, আবার বাদও দিতে পারে।
তিনি বলেন, আশরাফুল মনোনয়ন পাওয়ায় দলের নেতারা ক্ষোভ জানিয়েছেন। আশরাফুলের বাবা একসময় বাঁশগাড়ি ইউপির চেয়ারম্যান এবং উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন। বাঁশগাড়িতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিপক্ষের অনেক লোক তাঁর হাতে অতীতে খুন হয়েছে। এ বিষয়ে আশরাফুল হকের বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। এসএমএস দিলেও কোনো সাড়া দেননি।
দলীয় প্রার্থী হিসেবে আশরাফের নাম কেন্দ্রে পাঠানোর বিষয়ে বক্তব্য নিতে নরসিংদী-৫ আসনের সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুকে ফোন করা হলে তিনিও ধরেননি। এমনকী তাকে এসএমএস দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
আগামীনিউজ/নাসির