বরগুনা: জেলার বেতাগীতে করোনার করুন পরিস্থিতিতে হতদরিদ্রদের জন্য সরকারের দেওয়া ১০ টাকার চালপ্রাপ্তদের তালিকা তৈরিসহ চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
স্বজনপ্রীতি করে দরিদ্রদের এই তালিকায় এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অন্তর্ভুক্ত করেছেন তার ছেলের, আপন বোনের ও নিজ মসজিদের ঈমামের নামও। এছাড়াও প্রতিটি ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের চালের সুবিধাভোগীদের তালিকায় রয়েছে জনপ্রতিনিধিদের পছন্দের ব্যক্তি, দলীয় লোক, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রভাবশালী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিরা। এর পরই তৈরি হয় দরিদ্র মানুষের অভিযোগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর আওতায় হতদরিদ্র সুবিধাভোগীদের ১০ টাকা কেজি দরে চাল দিচ্ছে। একটি হতদরিদ্র পরিবার প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল পাবে। কিন্তু ২ নং বেতাগী সদর ইউনিয়নের সুবিধাভোগী হতদরিদ্রদের তালিকায় রয়েছে বর্তমান চেয়ারম্যান মো. হুমায়ূন কবিরের ছেলের, আপন বোন এবং নিজ মসজিদের ঈমামের নাম। তালিকার ১০ নম্বর ক্রমিকে চেয়ারম্যান পুত্র মো. গোলাম শাহরিয়ার মনির, ৯ নম্বর ক্রমিকে তার আপন বোন মোসা: সাইদুননেছা বেগম। স্বামী মো: মোসলেম, বাড়ি উপজেলার ১নং বিবিচিনি ইউনিয়নে। ৭ নম্বর ক্রমিকে তার নিজের মসজিদ খালিফা বাড়ি জামে মসজিদের ঈমাম মো: আবুল বাশারের তার পিতা: মো: হানিফ হাওলাদার তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন।
তালিকায় নামের পাশে ছেলে, বোন ও ঈমামের পেশা হিসেবে দিনমজুর উল্লেখ করা হলেও স্থানীয়রা জানায়, তারা কেউই দিন মজুর নয়। বিশেষ করে চেয়ারম্যানপুত্র মো. গোলাম শাহরিয়ার মনির প্রায় দুই লাখ টাকার মটর সাইকেলে চলা ফেরা করে এবং বেতাগী সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। তবে চেয়ারম্যানপুত্র এটি তাঁর বাবার দেওয়া বলে দাবি করেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশের না শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, বেতাগী সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান প্রকৃত দরিদ্র ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে তার পছন্দের ব্যক্তি, আত্মীয়-স্বজন ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের নাম খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
তালিকায় নাম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যানপুত্র মো. গোলাম শাহরিয়ার মনির আগামী নিউজকে বলেন, আমার কোন ইনকাম নেই। এটা প্রধানমন্ত্রীর একটা খাদ্য কর্মসূচি। এ জায়গায় যে কারো নাম থাকতে পারে।আমার চেয়ে বড় বড় ফ্যামিলির নামও এ জায়গায় আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. হুমায়ূন কবির আগামী নিউজকে বলেন, আমার ছেলে একজন দিনমজুরের জন্য নামটি নিয়েছে। পরবর্তীতে সে নামটি আরেক জনকে দিয়ে দিয়েছে। ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের কর্মী হিসেবে তার ছেলে এবং আত্মীয় স্বজন গরীব হলেও সেই সব কার্ডধারী চাল পেতে পারেও বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অবশ্য সরকারি নীতিমালায় যার নামে কার্ড রয়েছে। সেই কার্ড হস্তান্তর কিংবা কার্ডধারীদের চাল অন্যকে দেওয়ার কোন বিধান কিংবা কোন ধরনের সূযোগ নেই বলে বলা হয়েছে।
বেতাগী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মো: গোলাম মোস্তফা আগামী নিউজকে বলেন, ‘এ নিয়ে খোঁচাখুচির প্রয়োজন নেই। সবাই খেয়ে বাচুঁক। আমার কথা তাই।’
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সুহৃদ সাহেলহীন আগামী নিউজকে বলেন, সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর চালের নামের তালিকায় স্বজনপ্রীতির কোন সুযোগ নেই। তদন্ত সাপেক্ষে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আগামীনিউজ/ হাসান