কক্সবাজারঃ জেলার উখিয়া কুতুপালংয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একটি গ্রুপের গুলিতে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের নেতা মাষ্টার মুহিব্বুল্লাহ নিহত এবং আরও একজন আহত হয়েছে।
বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে এই ঘটনা ঘটেছে।
উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়োজিত ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান (এবিপিএন) এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
নিহত মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের অধিকার বিষয়ক ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের’(এআরএসপিএইচ) প্রধান ছিলেন।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির কুতুপালংয়ে বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে গড়ে তোলা তাদের অফিসে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে নিয়ে মিটিং করা হত। কুতুপালংয়ের সেই অফিস থেকে তার শুরু, সেই এআরএসপিএইচের অফিসেই শেষ হলেন তিনি।
কক্সবাজারে আটকে পড়া অন্তত ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের কথা বলার মূলকণ্ঠ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা এআরএসপিএইচ সংগঠনটি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিলেন।
রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির নেতা মাষ্টার মুহিবুল্লাহ নিহত হওয়ার পরবর্তী সময়ে উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির। তবে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সর্তক অবস্থানে রয়েছে।
উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে নিয়োজিত ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান (এবিপিএন) এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান জানান, বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে (এশার নামাজের পর) রোহিঙ্গা নেতা এবং মাষ্টার মুহিবুল্লাহ (৫০) এফডিএমএন ক্যাম্প-১ ইস্ট, ব্লক-ডি, ৮ এ রোহিঙ্গাদের অধিকার বিষয়ক ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) প্রধান কার্যালয়ে অবস্থান করছিল।
সেই অফিসেই অজ্ঞাতনামা বন্দুকধারী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা তাকে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। বন্দুকধারীরা তাকে লক্ষ্য করে ৫ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। তিন রাউন্ড গুলি মুহিব্বুল্লাহর বুকে বিদ্ধ হয়। এতে গুরুতর আহত মুহিব্বুল্লাহকে উদ্ধার করে দ্রুত কুতুপালং এমএসএফ হল্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মুহিব্বুল্লাহর লাশ দ্রুত উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে রোহিঙ্গারা যখন বাংলাদেশে যখন আশ্রয় নিয়েছিল তখন তাদের প্রতি স্থানীয় বাসিন্দারা এবং সরকার উদার মনোভাব দেখিয়েছে। কিন্তু বছর না ঘুরতেই পরিস্থিতি বদলে গেছে। সে সহানুভূতির ছিটেফোঁটাও এখন অবশিষ্ট নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গাদের একটি অংশ ইয়াবা, স্বর্ণ চোরাচালান, ডাকাতি, অপহরণ, হত্যা, মুক্তিপণ আদায়সহ নানা ধরণের অপরাধের সাথে জড়িয়েছে।
পুলিশ এবং র্যাব-এর ভাষ্য অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের গ্রুপগুলো ক্যাম্পের ভেতরে নানা অপরাধ করে গহীন পাহাড়ে লুকিয়ে যায়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপ সন্ধ্যার পর ক্যাম্পগুলোতে তৎপর হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অভিযান আরো জোরালো করা হবে বলে কর্মকর্তারা বলছেন।
এদিকে, ২০১৭ সালে শিক্ষক থেকে অধিকারকর্মী হয়ে ওঠা মুহিব্বুল্লাহ নেতৃত্ব দিচ্ছেন এআরএসপিএইচের। শরণার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মিটিংগুলোতে তিনি হয়ে উঠেছেন মুখপাত্র। বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির কুতুপালংয়ে বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে গড়ে তোলা তাদের অফিসে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে নিয়ে মিটিং করা হত। সেই অফিস থেকে তার শুরু, সেই এআরএসপিএইচের অফিসেই শেষ হলেন তিনি।