ঝালকাঠি: সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। জেলায় প্রতিবছরই জমজমাটভাবে শারদীয় দুর্গাপূজার উৎসব পালন করা হয়। পূজাকে সামনে রেখে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিমা তৈরির কারিগররা।
ঝালকাঠি পুলিশ সুপার কার্যালয়ের বিশেষ শাখা সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবছর পূজা হবে মোট ১৬৯টি মন্ডপে। একযোগে কাজ চলছে ঝালকাঠি সদরের ৭৩ টি, কাঁঠালিয়া উপজেলায় ৫৪ টি, রাজাপুরে ২১টি এবং নলছিটি উপজেলায় ২১ টি মন্ডপে। মন্ডপ ঘুরে দেখাগেছে এখন পর্যন্ত প্রতিমা তৈরির প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আর কয়েকদিন পরেই রং তুলির আঁচড়ে প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে প্রতিমাগুলো। আগামী ১১ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে দুর্গাপূজা শুরু হবে।
প্রতিমা তৈরি নিয়ে কথা হয় কারিগর মৃৎশিল্পী পরাণ পালের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গত ২৫ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করছি। এবার ৯টি মন্ডপের প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছি। সময়মত এসব প্রতিমা পূজাউদযাপন কমিটির নিকট হস্তান্তর করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। তবে করোনার আগে প্রতিটি প্রতিমা তৈরি করতে ৫০ হাজার টাকা পাওয়া যেত। কিন্তু চলমান পরিস্থিতির কারনে প্রতিমা তৈরির মজুরী ২৫/৩০ হাজার টাকায় নেমে এসেছে’।
ঝালকাঠি শহরের হরিসভা রাঁধাগবিন্দ মন্দিরের দুর্গামন্ডপের প্রতিমা কারিগর উত্তম পাল বলেন, ‘বাপ-দাদার ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য এই পেশার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছি। কিন্তু আমার সন্তানরা অন্য পেশায় চলে গেছে। বর্তমানে জিনিষপত্রের দাম বেশি হওয়ায় আমাদের আগের মতো পোশায় না। আমি এবার ১৪ খানা প্রতিমা বানানোর কাজ পেয়েছি। বাড়িতেও কিছু প্রতিমা বানিয়ে রেখেছি কমদামে রেডিমেট বিক্রি করার জন্য’।
গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া থেকে ঝালকাঠি মদনমোহন আখড়াবাড়ি মন্ডপে প্রতিমা তৈরি করতে আসা ভাস্কর শ্রীবাস গাইন বলেন, হাতে সময় আছে ১৭/১৮ দিন। এর মধ্যে মাটিরকাজ, রং, পোশাক এবং অলংকার পরানোর কাজ শেষ করে মন্দির কতৃপক্ষের কাছে প্রতিমা বুঝিয়ে দিতে হবে। তাই ৫ জন মিলে কাজ করে যাচ্ছি।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের ঝালকাঠি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক পৌর কাউন্সিলর তরুণ কুমার কর্মকার বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে ১৬৯টি মন্ডপে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত রাখতে প্রতিটি মন্ডপ কমিটি প্রধানদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে যেহেতু সকল মন্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে সেহেতু রাতে মন্ডপগুলোতে প্রতিমা এবং কারিগরদের নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব সেচ্ছাসেবকদের সমন্বয়ে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশের মাধ্যমে এবারের শারদীয় উৎসবকে বর্ণীলভাবে পালন করার আশাবাদী।
তরুণ কুমার কর্মকার আরো বলেন, পঞ্জিকা মতে, এ বছর দেবী দুর্গা আসবেন ঘোটকে করে, আর গমন করবেন দোলায় চড়ে। এবছর মায়ের কাছে বিশ্ব মহামারি থেকে মুক্তির জন্য বিশেষ প্রার্থনা করা হবে।
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, জেলার সকল পূজামন্ডপে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ ও আনসার নিয়োগ করা হবে।