রংপুরঃ জেলার পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের উত্তর তাম্বুলপুর (সওদাগরপাড়া) গ্রামের আব্দুর রশিদ প্রামানিক ও রীনা বেগম দম্পত্তির ছেলে ইউনুস আলী রিপন (২৫)।
তিনি গত ৫বছর আগে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। চাকরির তিন বছর পর কাউনিয়া উপজেলার নিলাম খরিদা ভায়ার হাটের রুস্তম আলীর মেয়ে মোছা. রেশমা আক্তারের সাথে
পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। রিপনের চাকরির প্রথম কর্মস্থল ছিল দিনাজপুরে এরপর কুড়িগ্রাম ও শেষে গাইবান্ধায় পুলিশ লাইনে এসএএফ শাখায় কর্মরত ছিলেন।
কর্মরত থাকাকালীন গত ৮এপ্রিল হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লে গাইবান্ধা সিভিল সার্জন এর শরণাপন্ন হলে তাকে জরুরি ভিত্তিতে রংপুর মেডিকেল কলেজে রেফাট করা হয়। সেখানে দুইদিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তিনি জানতে পারেন তার ক্রুনিক কিডনি ডিজেজ হয়েছে। রিপনের পরিস্থিতি খারাপ হলে তাকে প্রথমে হেমোডায়ালাসিস করতে পরামর্শ দেন, যা অনেক ব্যয়বহুল। আর এতো ব্যয়বহুল চিকিৎসা তার পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব ছিলনা। তারপর গাইবান্ধা জেলা পুলিশ সুপারের আর্থিক সহযোগিতায় হেমোডায়ালাইসিস শুরু করেন। পাশাপাশি কিডনি ম্যানেজ করার জোর চেষ্টা করেন।
প্রথমে তার স্ত্রী মোছা. রেশমা আক্তারের সাথে তার কিডনি ম্যাচ করে। কিন্তু তার স্ত্রী তাকে কিডনি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এমনকি তার স্ত্রী সংসার করবেনা বলে জানিয়ে দেয় তার স্বামীর পরিবারকে। শেষমেষ তার বাবা মাথা গোজার শেষ সম্বলটুকু ছেলের স্ত্রী মোছা. রেশমা বেগমকে লিখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবুও রেশমা বেগম একটা কিডনি দিতে রাজি হননি তার স্বামীকে।
পরিশেষে কারও সাথে কিডনি ম্যাচ না হওয়ায় রিপনের মা মোছা. রীনা বেগম (৫৫) তার একমাত্র ছেলেকে একটা কিডনি ট্রান্সফারের জন্য ডাক্তারের কাছে অনুরোধ করেন। মায়ের অনুরোধে গত শুক্রবার ঢাকার সিকেডি এন্ড ইউরোলজি হাসপাতালে তার মায়ের কিডনি অপারেশন করে ছেলের বুকে প্রতিস্থাপন করেন প্রফেসর ডাক্তার কামরুল ইসলাম।
ইউনুস আলী রিপনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মায়ের ঋণ কখনো শোধ হয় না। আমার মা আমার জন্য যা করেছে তা কোনদিন শোধ হবে না। যখন কারো কাছে কিডনি পেলাম না। তখন আমার মা আমাকে নতুনভাবে বেঁচে থাকার জন্য একটা কিডনি দিয়েছে। আমার ও আমার মায়ের সুস্থতার জন্য সবাই দোয়া করবেন।