নারায়ণগঞ্জঃ জালিয়াত চক্রের খপ্পরে পড়ে এখন নিঃশ্ব প্রায় রূপগঞ্জের কৃষক মনু মিয়া ও তার পরিবার। ভিটে মাটি হারিয়ে এখন মানুষের ধারে ধারে ঘুরছেন তারা। রূপগঞ্জে সাড়ে ৩ শতাংশ জমি জমি কেনার কথা বলে ৩৫ শতাংশ জমি লিখে নিয়েছে একটি জালিয়াতচক্র।
সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবে এসে কাঁদকে কাঁদতে এমনি অভিযোগ করেন উপজেলার খাস কামালকাঠি এলাকার নিঃশ্ব মনু মিয়ার পরিবার।
ঘটনা জানতে পেরে তাদের জিজ্ঞেস করায় উল্টো হত্যার হুমকি দিচ্ছে বলে জানান মনু মিয়ার পরিবার। সর্বস্ব খুইয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন সে পরিবারটি। উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের খাস কামালকাঠি এলাকায় ঘটেছে এই ঘটনা।
ভুক্তভোগী মনু মিয়া জানান, তিনি দাউদপুর ইউনিয়নের খাস কামালকাঠি এলাকার মৃত তছুরউদ্দিনের ছেলে। পারিবারিক সমস্যার কারনে তারা ৪ ভাই এক বোন মিলে তাদের কামালকাঠি মৌজার আর এস- ৫৬৮ ও ৫৬৯ নং খতিয়ানভুক্ত জমির ৫২ শতাংশ থেকে সাড়ে ৩ শতাংশ বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। পরে গত ২৩ মে সে এলাকার খিদুর বক্সের ছেলে কাদির ও খালেকের ছেলে গোলজার হোসেন সাড়ে ৬ লাখ টাকা দামে জমিটি জমিটি কিনতে তাদের ভাইবোনদের রূপগঞ্জ সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে নিয়ে যায়।
পরে তারা দাম বুঝে পেয়ে খাস কামালকাঠি এলাকার মিয়া বক্সের ছেলে নজরুল ইসলামের নামে সাড়ে ৩ শতাংশ জমি লিখে দিয়ে আসেন। যার আমমোক্তার নামা দলিল নং ৫৪৭৭/২১। এদিকে চলতি মাসের ৫ সেপ্টেম্বর নজরুল লোকজন নিয়ে দলিল করা জমি থেকে ৩৫ শতাংশ জমি দখল করতে আসে। এতে তারা হতবাক হয়ে যায়। এরপর জমির দলিল তুলে দেখতে পায় প্রতারক নজরুল সাড়ে ৩ শতাংশ জমির পরিবর্তে ৩৫ শতাংশ জমি লিখে নিয়েছে দলিল লিখক জাকিরের সহযোগীতায়।
দলিল উঠানোর পর গত ১০ সেপ্টেম্বর জমির মালিক মনু তার ভাই জাইদুল, কামাল, জামাল ও বোন হাসিনা প্রতারক নজরুল তার সহযোগী কাদির ও গোলজারকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে গেলে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা উল্টো মারধর করে এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি না করার জন্য হুমকি দেয়। অন্যথায় হত্যা করে তাদের গুম করে ফেলা হবে বলে শাসায় তারা। এ ঘটনায় মনু মিয়া বাদি হয়ে প্রতারকদের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানা যায়, এ চক্রটি প্রতিনিয়তই অণ্যের জমি জালিয়াতি করে বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে অনেকেই নিঃশ্ব হয়ে পথে পথে ঘুরছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত নজরুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি তাদের কাছ থেকে ৩৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেছি। কিন্ত তারা এখন বলছে সাড়ে ৩ শতাংশ। আমি প্রথমে খোলা বায়না করে জমি রেজিষ্ট্রি করেছি। তবে কতো টাকা দিয়ে তিনি জমি কিনেছেন তা জানাতে অস্বীকার করেন নজরুল।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের সাব রেজিষ্ট্রার শফিউল বারি বলেন, এ ধরনের প্রতারনার ঘটনা ঘটে থাকলে আমার কাছে যদি ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন তাহলে সংশ্লিষ্ঠ দলিল লিখকের মাধ্যমে জমি গ্রহিতাকে ডেনে এনে সমাধানের চেষ্টা করবো। তিনি যদি সমাধান না করেন তাহলে দলিল বাতিলের আবেদনসহ তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করা হবে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, জাল জালিয়াতি করে জমি লিখে নেয়া ও প্রাণনাশের হুমকির ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। প্রতারক চক্রের মুল হোতা নজরুলসহ তার সহযোগীদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে পুলিশ। তাদেরকে অতি দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।