চরজব্বার থানার ওসির ফোন ক্লোন করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

মুজাহিদুল ইসলাম সোহেল, নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ১০, ২০২১, ০৫:০৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালীঃ জেলার সুবর্ণচরের চরজব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার(ওসি) সরকারি মোবাইলফোন নম্বর ক্লোন করে এক ৪ নম্বর চর ওয়াপদা ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যান প্রার্থী মো.মনির আহমেদের কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। প্রতারক চক্র ৮টি নাম্বার দিয়ে এসব টাকা হাতিয়ে নেন। টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে চরজব্বার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। এ সময় প্রতারক চক্র ওসির সরকারি নম্বর থেকে আরো তিনজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ কয়েকজনকে কল করে টাকা দেয়ার দাবি করা অভিযোগ পাওয়া গেছে । বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।

চরজব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার(ওসি) মো. জিয়াউল হক নিজেই জিডির খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, প্রতারক চক্রকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

সুবর্ণচর উপজেলার ৪নম্বর চরওয়াপদা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনির আহমেদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সাড়ে নয়টার দিকে চরজব্বার থানার ওসি মো. জিয়াউল হকের সরকারি নম্বর থেকে আমার ফোনে কল আসে। এ সময় অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে প্রশাসনিক সহযোগিতা নিতে চাইলে টাকা দিতে হবে। তিনি বলেন জনগণ চাইলে আমি নির্বাচিত হব না হব না। অপর প্রান্ত থেকে ওসি বলেন, আপনি আমাকে বিশ্বাস করেন না। তিনি তার সাথে থাকা একজন কে বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নোয়াখালী পরিচয় দিয়ে তার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের পরামর্শমত অন্যান্য কর্মকর্তাদেরকে ম্যানেজ করার জন্য ৩,০০০০০/—(তিন লক্ষ) টাকা পাঠানোর জন্য বলেন।অন্য দুটি নাম্বারে ১ লক্ষ টাকা।

ওসির সাথে তেমন একটা কথা হয়নি আগে। তাই কন্ঠ চিনতে পারিনি। ফোন পেয়ে কিছু টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। পরে ফোনে বিষয়টি সহকর্মীকে জানাই।’তখন সে বলে আমাকেও ফোন করেছে টাকার জন্য আমি ওসির কন্ঠ বুঝি,আমি পরিচয় জানার পর ফোন কেটে বন্ধ করে দেয়।

ওসি নাম্বার ক্লোনকারী ব্যক্তি বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের ব্যক্তিগত মোবাইল ০১৩০৪—৯৪৪৪৬৮ নাম্বারে কল দিলে তিনি চেয়ারম্যানকে ০১৭৩৩—৮১৬৯৬৪, ০১৭৬১—১০৬৩৭৩, ০১৭৯৭—৬০৪৫১৮, ০১৩২২—৬৫৯৪৩৫, ০১৮৬৩—৬৬৭০৪৬, ০১৮৭১—৬৯৫০৩৮, ০১৩২০—৮৩৬৭৫৮ এবং ০১৮৭১—৬৯৫৮৪১ এর প্রত্যেকটি নাম্বারে ৫০,০০০/—(পঞ্চাশ হাজার) টাকা করে ৪ লক্ষ টাকা পাঠাতে বলেন।
এর পর প্রতারকচক্র রাত ৯টার দিকে থানায় গিয়ে পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে বলেন।চেয়ারম্যান রাত নয়টায় থানায় গিয়ে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে আইনের আশ্রয় নেন।

চরজব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার(ওসি) মো. জিয়াউল হক বলেন, তাঁর সরকারি মোবাইল ফোন নম্বরের মধ্যে ০১৩২০ কোডের একটি নম্বর ক্লোন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিনভর সরকারি এই নম্বর থেকে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ফোন করে কৌশলে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ তিন ব্যক্তি বিষয়টি তাঁকে জানান। প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের অবস্থান নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।

ওসি বলেন, নম্বর ক্লোন করে চাঁদা নেওয়ার ঘটনায় ৪নম্বর চরওয়াপদা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনির উদ্দিন বাদী হয়ে চরজব্বার থানায় জিডি করেন। বিকাশ ও বিভিন্ন এজেন্টের সহায়তায় ২ লক্ষ টাকা উদ্ধার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাকী টাকাসহ তাদেরকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।