আজিমনগর ইউনিয়ন

হরিরামপুরে পদ্মার ভাঙন থেকে রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন

অপু সাহা,হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২১, ০৭:১৯ পিএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

মানিকগঞ্জঃ গত দুই সপ্তাহের ভাঙনে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের শতাধিক পরিবারের বসতভিটা, ফসলি জমি, পাকা সড়ক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, মসজিদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, ৫৭নং হারুকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুইটি আশ্রয়ন প্রকল্প, দুইটি আদর্শ গ্রাম, বাজারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) সকালে ভাঙন পরিদর্শন করেন মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ, হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন।

পরিদর্শনকালে তারা বলেছিলেন, আজ-কালের মধ্যেই ভাঙন রোধে কাজ শুরু হবে। কিন্তু এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কাজ শুরু হয়নি-এমন অভিযোগ তুলে গতকাল সকালে হাতিঘাটা পদ্মাপাড় ও আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে মানববন্ধন করে প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ।

মানববন্ধনে মো. মহিদুর রহমান মৃধা বলেন, ‘‘ভাঙন দেখতে কর্মকর্তারা এসেছিলেন। তারা উপরের তলার মানুষ। নিচু তলার মানুষের কষ্ট তারা বোঝেন না। চর আমাদের স্বপ্নের ঠিকানা। আমাদের স্বপ্নের এই ঠিকানা যদি ভেঙে যায়, তাহলে আমরা কোথায় যাবো। ভাঙনরোধে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”

হাতিঘাটা গ্রামের কাজী মোবারক হোসেন ওরফে মাসুম কাজী বলেন, ‘‘অনেক দুঃখ-বেদনা নিয়ে আজকে মানববন্ধনে এসেছি। পদ্মা নদী আজিমনগর ইউনিয়ন গ্রাস করে নিয়ে যাচ্ছে। ভিটেমাটি হারা মানুষ কষ্টে দিনযাপন করছে। গত মঙ্গলবার ডিসি, ইউএনও এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এখানে এসেছিলেন। তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, আজ-কালের মধ্যে কাজ শুরু হবে। কিন্তু এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও কাজ শুরু হয়নি। আমরা এখন হতাশায় ভুগছি। আমাদের ভিটেমাটি টুকু যদি চলে যায়, তাহলে রাস্তায় থাকতে হবে। পদ্মায় ইউনিয়ন পরিষদ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, মসজিদ, ফসলি জমি, বাড়িঘর নিয়ে গেছে। স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বাজার, স্কুল, আশ্রয়ণ প্রকল্প সব ভেঙে যাবে। যে সমস্ত জমিতে সোনার ফসল ফলতো তা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।” ভাঙনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনিই আমাদের শেষ ভরসা। আপনার সহায়তার আশায় আমরা বুক বেঁধে রইলাম”।

আজিমনগর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য মো. রাসেল মৃধা বলেন ‘‘আগে আজিমনগর চরের শিক্ষার হার বেশি ছিলো না। আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় শিক্ষার হার বেড়েছে। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় আমরা আশার আলো দেখেছিলাম, এখন চোখে অন্ধকার দেখছি। বিদ্যালয় ভেঙে গেলে চরের ছেলেমেয়েরা কোথায় লেখাপড়া করবে? আমরা ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”

আজিমনগর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য শেখ হালিম বলেন, ‘‘এখানে দুইটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রায় দুইশত পরিবার বসবাস করে। দুইটি আদর্শ গ্রামও রয়েছে। নদীতে এগুলো ভেঙে গেলে এই লোকগুলো কোথায় যাবে?”

হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘নদী ভাঙনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের। বিষয়টি আমরা তাদের জানিয়েছি।”

মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘‘ভাঙনের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এখনো কাজের অনুমোদন পাইনি। অনুমোদন পেলে কাজ শুরু করা হবে।

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, ‘‘পানির স্রোত বেশি থাকায় পাউবো কাজ করতে পারেনি। সিদ্ধান্ত হয়ে আছে, পানি কমে গেলে কাজ হবে।”