রাজশাহীঃ জলাবদ্ধতা নিরসন ও সেচ সুবিধাসহ দেশীয় প্রজাতির মাছ চাষের লক্ষ্য নিয়ে প্রায় চল্লিশ বছর আগে খাল খনন করা হয়েছিল । কতিপয় লোকজন দখলে নিয়ে খালের মাঝে মাঝে বাঁধ দিয়ে খন্ড খন্ড পুকুরে রুপান্তরিত করে মাছের চাষ করতে থাকে। এতে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা দেখা দেয় ।
বর্তমান সরকারের সময়ে সেই খালটি পুণঃখনন করা হয় প্রায় আড়াই বছর আগে। ২০১৯ সালের ২৪ মে প্রকল্পের আওতায় বাঘা উপজেলার মুর্শিদপুর থেকে নওটিকা পর্যন্ত ৮ দশমিক ২ কিলোমিটার খাল পুণঃখনন কাজের উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব শাহরিযার আলম এমপি (বাঘা-চারঘাট)। প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয় ‘রাজশাহী জেলার বাঘা, চারঘাট ও পবা উপজেলার জলাবদ্ধতা নিরসন এবং ভূ-অপরিস্থ পানির প্রাপ্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ।’ কৃষি মন্ত্রনালয়ের অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেন রাজশাহীর বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। প্রকল্পের এক তৃতীয়াংশ কাজ শেষ হলেও মামলা জনিত কারণে এখনো প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়নি।
বিষয়টি নিয়ে বাজুবাঘা ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন। তার অভিযোগে জানা যায়, বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ,রাজশাহী কর্তৃক পৌণে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে পুরাতন ওই খালটির পুণঃখনন কাজ শুরু করার ফলে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে শতশত কৃষক । কিন্তু খালের পুণঃখনন কাজে বাধার সৃষ্টি করে কতিপয় ব্যক্তিরা। জমির মালিকানা দাবি করে বিএমডিএ’র প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন, উপজেলার আরিফপুর গ্রামের তমেজ উদ্দিন, ঢাকাচন্দ্রগাঁতি গ্রামের মোজাহার আলী, নওটিকা গ্রামের আবুল কাশেম ও নিশ্চিন্তপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম । এনিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মানববন্ধনও করেছেন। যার ফলে বন্ধ হয়ে যায় খাল খননের কাজ।
খালটির খনন কাজ সম্পূর্ন করতে না পারা এবং অপরিকল্পিত পুকুর খননের কারনে প্রকল্প এলাকায় স্থায়ী রুপ নিয়েছে জলাবদ্ধতার। সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে খাল খনন কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন কুষকলীগের নেতা হাবিবুর রহমান।
তমেজ উদ্দিনের ছেলে তসলিম উদ্দিন বলেন, অধিগ্রহণ ছাড়াই ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে খাল খননের অভিযোগ এনে আদালতে তাদের কাগজপত্র জমা দিয়ে বিএমডিএ’র প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে চারটি মামলা করেছেন। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা এই খাল খনন করতে দেবেন না।
অভিযোগকারি মোজাহার আলী বলেন, আজগুবি চিন্তা নিয়ে এই খাল খনন করা হচ্ছে। খাল যে দিক দিয়ে গেছে, তার পাশেও আমবাগান আর বসত বাড়ি ছাড়া অন্য আবাদি জমি নেই বললেই চলে। তাদের দাবি, সরকার যদি একান্তই খাল খনন করতে চায়, তাহলে জমি অধিগ্রহণ করে খাল খনন করুক,এতে কোনো অপাত্তি নেই।
সরেজমিন মুর্শিদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নদীতে খালের পানি নামানোর জন্য পদ্মার মুখে সুইচ গেট করা হয়েছে।উপজেলার নওটিকা ,আরিফপুর, বেলগাছি, বারখাদিয়া, হিজোল পল্লী ও তেপুকুরিয়াসহ ৬ টি বিলের পানি সেই খাল দিয়ে নদীতে পড়ার কথা। কিন্তু বাস্তব চিত্র দেখা গেছে ভিন্ন।এর ফলে জলাবদ্ধতায় তলিয়ে আছে প্রায় ৫ শ’ বিঘা ফসলের মাঠ।নষ্ট হচ্ছে আমগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা।
মুর্শিদপুর গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক মাজদার রহমান বলেন, বহমান পদ্মা নদী অনেক আগেই বিরাট চর ফেলে দক্ষিণের সরে গেছে। খালের পানি আর পদ্মা নদীতে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দক্ষিনের নদীতে পানির গতিপথ ফেরানোর জন্য নতুন পরিকল্পনায় প্রকল্প করা যেতে পারে। ভুল নকশার ওপরে খাল খনন করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও নওটিকা গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, ফসলি জমির পানি নামানোর ব্যবস্থা ছাড়া কোন আবাদ করা সম্বব না।
উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান জানান, অপরিকুল্পিত পুকুর খননের কারণে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।এতে ফসল আবাদ বিঘ্নিত হচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশনায় নির্বাহি অফিসার পাপিয়া সুলতানা, বিএমডিএর জেলা প্রকৌশলী, প্রাণিসম্পদ অফিসার, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসারকে নিয়ে এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার পাপিয়া সুলতানা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আড়ানি ইউনিয়নের হরিপুর ও বেড়েরবাড়িসহ তিনটি জায়গা দিয়ে পানি নিষ্কাশনের জন্য চিহ্নিত করা হয়ে়ছে। ওই এলাকার পুকুর মালিকদের নিয়ে সমস্যার সমাধান করবো। খালের বিষয়টি নিয়েও সমাধানের চেষ্টা করছেন।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড: লায়েব উদ্দিন লাভলু বলেন,সকলের সুবিধার কথা চিন্তা করে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।