দিনাজপুরঃ জেলার বিরামপুর উপজেলার পৌরশহরের শিমুলতলী ঘাটে নদীতে ড্রেজার বসিয়ে দিনে-রাতে চলছে বালু উত্তোলন। নদীর পশ্চিমপাড় কেটে বালু উত্তোলন করায় প্রায় ৪০ বিঘা ফসলি জমি ধসে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বলে দাবি করছেন স্থানীয় ফসলি জমি মালিকরা। ইউএনও’র কাছে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী জমির মালিকরা।
এ বিষয়ে ইতোপূর্বে তিনবার অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় চতুর্থবার মতো ভুক্তভোগীদের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নজমুল ইসলাম নামের এক ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক।
অভিযোগ প্রদানকারী নজমুল ইসলাম বলেন, নদীতে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর পাড় ভেঙে ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। বকুল ও টিটুর নেতৃত্বে কতিপয় ব্যক্তি দিনে-রাতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু তুলে বিক্রি করছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) এ বিষয়ে চারবার অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার মেলেনি। অভিযোগ দিলে দু-একদিন বালু তোলা বন্ধ হলেও আবারো শুরু হয় বালু তোলার মহোৎসব। বালু উত্তোলনকারীরকে বাঁধা দিলে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতিসহ হুমকি দিয়ে থাকছেন। ইতোমধ্যে তার ১৩ বিঘার মধ্যে প্রায় ৩ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বালু তোলার কারণে পাড় ভেঙ্গে প্রসারিত হচ্ছে নদী। বন্যা হলে যেটুকু রয়েছে সেই জমি একটুকুও থাকবে না।
ফসলি জমির স্বত্ত্বাধিকারী এএসএম আব্দুল্ল্যাহ বলেন, আমি বিবাহসূত্রে শশুরের জমি পেয়েছি শিমুলতলী ঘাটে। সেখানে অবৈধ মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে আশপাশের কৃষকের জমি নদীতে ধসে গেছে। এভাবে ধসতে থাকলে কিছুদিন পরে আমারো সেই জমিতে ধসে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। ধস প্রতিরোধে আমি তিনবার লিখিত অভিযোগ দেই। অভিযোগ দেয়ার পর থেকেই বালু উত্তোলনকারীরা আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে শুরু করেন। বালু উত্তোলনকারী কাগজ দেখিয়ে বলছেন সরকার তাদেরকে জমি লীজ দিয়েছেন বালু মহলের নামে। আমার জানা মতে, সরকার কাউকে ফসলি জমির পাড় লিজ দেয় না। সরকার নদী সংরক্ষণে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে। আর সেই নদীর পাড় ভেঙে শতশত মানুষের ভোগান্তির কারণ সরকার হবে বলে মনে করি না। তারপরেও বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে তিনি কখনো স্থানীয় সংসদ সদস্য আবার কখনো উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে যেতে বলেন। পরে কৃষকদের অনুরোধে আবারো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গেলে তিনি আবারো অভিযোগ দিতে বলেন। আগে শুধু বিকাল থেকে রাতে বালু উত্তোলন চলছিল। অভিযোগ দেয়ার পর এখন দিনে-রাতে বালু তোলা হচ্ছে দেদারচ্ছে। এ যেনো রীতিমতো ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে।
কৃষক মানিক বলেন, জ্ঞান হওয়ার পর থেকে দেখছি ওই জমিতে আমার বাবা চাষাবাদ করতেন। কিন্তু অবৈধ মেশিন লাগিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে সেই জমি নদীতে ধসে যাচ্ছে। বন্যা হলেই আমার ওই জমি পুরোটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। আমরা এর প্রতিকার চাই। বালুখোকাদের হাত থেকে নিজের ফসলি জমি বাঁচাতে চাই।
এ বিষয়ে বালু মহলের ইজারাদার হিসেবে দাবীদার মো. বকুল মুঠোফোনে বলেন, বিরামপুরে যে ৬টি বালুর পয়েন্টের সবগুলোই তাদের। বিরামপুরের হোসেনপুর মৌজার শিমুলতলী বালুমহলটিই হচ্ছে একমাত্র বৈধ বালুমহল। ৩০১ দাগে ৯ একর ২৪ শতাংশ জমি রয়েছে। ওই জমির বৈধ কাগজপত্র নিয়েই বালু তোলা হচ্ছে। একটি বৈধ বালু মহল থাকলেও সরকার দলীয় স্থানীয় নেতাদের সমন্বয়ে বিভিন্ন এলাকার ৬টি স্থান থেকে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করা হচ্ছে। যারা অভিযোগ করছেন তাদের কোন কাগজপত্র নেই। তারা মিথ্যা অভিযোগ করছেন।
বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরিমল কুমার সরকার বলেন, অভিযোগ পেয়ে তহশিলদার ও সার্ভেয়ারকে শিমুলতলী ঘাটে পাঠানো হয়েছিল। যেখান থেকে বালু তোলা হচ্ছিল সেটি বালুমহলের জায়গা। যে ব্যক্তি অভিযোগ দিয়েছেন নদীর থেকে তার জমি দূরে রয়েছে। তবুও যদি বালু উত্তোলনের জন্য যদি জমি ভেঙে নদীতে বিলীন হয় তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।