“অসুস্থ পিতার জন্য ওষুধ কিনবো কিভাবে”

বিল্লাল হোসেন,যশোর প্রতিনিধি আগস্ট ২৯, ২০২১, ১০:৫৮ পিএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

যশোরঃ রোববার দুপুর ২টা বেজে ৩৫ মিনিট। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল প্রশাসনিক ভবনে অফিস কক্ষের সামনে হাউমাউ করে কাঁদছেন এক নারী। কি হয়েছে আপনার প্রশ্ন করতেই কাঁন্না আরও বেড়ে যায়। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, শপিং ব্যাগ কেটে আমার সব টাকা নিয়ে গেছে এখন অসুস্থ পিতার এক্সরে ও ওষুধ কিনবো কিভাবে”।

শাহিদা বেগম নামে ওই নারী জানান, তার পিতা যশোরের শার্শা উপজেলার নাভারনের যাদবপুর গ্রামের বাসিন্দা আশরাফ আলী দীর্ঘদিন ধরে শারীরিকভাবে অসুস্থ। পায়ে গ্যাংরিন হওয়ার পরে অবস্থা আরও গুরুতর হয়েছে। আর্থিক অবস্থা দুর্বল হওয়ার কারণে পিতাকে চিকিৎসা করাতে ব্যর্থ তারা। ১৭ দিন আগে তার পিতাকে ভর্তি করেছিলেন শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু সেখানে চিকিৎসাসেবার পরও শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। চিকিৎসক তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করলেও টাকার অভাবে আনতে পারছিলেন না। পিতার চিকিৎসার জন্য বোনেরা মিলে ৮ হাজার টাকা জোগাড় করেন। এরপর রোববার (২৯ আগস্ট) বেলা ১২ টার দিকে আশরাফ আলীকে যশোর হাসপাতালের অর্থো-সার্জারী মডেল ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। শাহিদা বেগম আরও জানান, চিকিৎসক এক্সরে করার নির্দেশনা দেন। এক্সরে করার জন্য টাকা জমা দিতে গিয়ে দেখতে পান তার শপিং ব্যাগটি কাটা। ব্যাগের মধ্যে ৮ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোনটি নেই। ব্লেড দিয়ে ব্যাগটি কেটে তার টাকা ও মোবাইলটি নিয়ে গেছে।

শাহিদা বেগম জানান, ৮ হাজার টাকা খুইয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেক কষ্টে ওই টাকা ম্যানেজ করেছিলেন। এখন অসুস্থ পিতার চিকিৎসার কোনে টাকা তার কাছে নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালকে ঘিরে একটি চক্র গড়ে উঠেছে। তারা সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ২ থেকে আড়াইটা পর্যন্ত হাসপাতালের বিভিন্ন কোনে অবস্থান নেন। এরপর সুযোগ বুঝে নগদ টাকা, মোবাইল নিয়ে কেটে পড়ে। এরআগেও হাসপাতালে এমন একাধিক ঘটনা ঘটেছে।

এছাড়া মণিরামপুর উপজেলার কপালিয়া গ্রামের আলী হোসেনের স্ত্রী নাজমা বেগম(৩৫) তার নাতী ছেলেকে নিয়ে প্রায় এক মাস যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। পায়ের সমস্যার জন্য তিনি তার নাতী ছেলের পাশে রয়েছেন। শনিবার সকালে তিনি নিজের চিকিৎসার জন্য বহির্বিভাগের টিকিট কাটেন। কাউন্টার থেকে তাকে করোনারী ভবনের নিচ তলার ৪ নম্বর কক্ষে ডাক্তার দেখানোর জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। সেই মোতাবেক তিনি ৪ নম্বর কক্ষের সামনে বসলে কে বা কারা তাকে পানিয় জাতীয় কিছু খাইয়ে দিলে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এসময় তার কানের দুল, চেইনসহ অন্যান্য স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে। এরপর স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দেন।

তার মেয়ে মুক্তি জানান, সকাল ১০টার দিকে তার মা নিচে আসেন। দুপুর ২টা বাজলে তার ফিরে না যাওয়ায় তিনি খুঁছতে থাকেন। এক পর্যায়ে দুপুর ৩টার দিকে তাকে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি অবস্থায় পেয়েছেন। এ সময় তার জ্ঞান ছিল না। পরে জ্ঞান ফিরলে তিনি সবকিছু জানতে পেরেছে। হাসপাতালের একটি চক্র তার মায়ের কাছ থেকে সব কিছু ছিনিয়ে নিয়েছেন।