ব্রাহ্মণবাড়িয়াঃ গ্রামের সহজসরল কৃষক জজ মিয়ার স্ত্রী ফরিদা আক্তার (৪০) ও তার মেয়ে মুন্নী (৮) ব্রাহ্মণবাড়িয়া এসে আর চিকিৎসা নেওয়া হলো না। তার স্ত্রী ও মেয়েকে বাড়ির পাশের নৌকাঘাট থেকে বিকেলে যাত্রীবাহী নৌকায় তুলে দেন জজ মিয়া। এর আগে শুক্রবার রাতে আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে শনিবার সকালে চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা ছিল তার স্ত্রী-মেয়ের। কিন্তু ডাক্তার না দেখিয়েই রাতেই লাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তারা।
শনিবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে বাড়ির পাশে কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে তাদের। এখন নিহতদের বাড়িতে এখন চলছে সুখের মাতম। স্ত্রী আর ছোট্ট মেয়েকে হারিয়ে বারবার মূর্ছায় যাচ্ছেন জজ মিয়া।
নিহত ফরিদা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের গেড়াগাঁও গ্রামের রাজবাড়ির জজ মিয়ার স্ত্রী ও মুন্নি তার মেয়ে।
গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে লইসকা বিলে বালুবাহী ট্রলারের ধাক্কায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া অভিমুখী ৭০-৮০ জন যাত্রী নিয়ে নৌকাটি ডুবে যায়।
যাত্রীবাহী নৌকা ডুবির ঘটনায় শনিবার (২৮ আগস্ট) শনিবার বিকেল পর্যন্ত ২২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ফরিদা ও মুন্নি (৮) রয়েছে।
ফরিদার স্বামী জজ মিয়া বলেন, আমার স্ত্রীর কোমরে ব্যথা। শনিবার সকালে ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল। আমি নিজে তাদের চম্পকনগর নৌ-ঘাট থেকে নৌকায় তুলে দিয়েছিলাম। রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে এক আত্মীয়র বাসায় থেকে সকালে ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল তাদের। নৌকাটিতে অতিরিক্ত যাত্রী ছিল। এ কারণেই নৌকাটি ডুবেছে।
এ ঘটনায় পানিতে ডুবে ওই বাড়ির আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন মৃত মালু মিয়ার স্ত্রী মনজু বেগম (৬২) ও আব্দুল হাসিমের স্ত্রী কমলা বেগম (৬৫)। ৎ
মানজু বেগমের মেয়ে মৌসুমি আক্তার জানান, আমার নানু অসুস্থ, সেজন্য আমার চাচি কমলাকে নিয়ে নানুর বাড়ি যাচ্ছিল মা। ভাতার জন্য কয়েকদিন আগে মা ছবি তুলেছিলেন। সেই আমার কাছে দিয়ে বলেছিলেন বাবার ছবির সঙ্গে ছবিটা বাঁধিয়ে রাখার জন্য। আমি তখন বুঝতে পারিনি আমার মা এভাবে ছবি হয়ে যাবে।
এছাড়া নৌকা ডুবির ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমিনকে প্রধান করে করা তদন্ত কমিটিকে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।