দিনাজপুরঃ ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নে কাল বৃহস্পতিবার দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে সমাবেশ করবে তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ, বিদ্যুৎ, বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। একই দাবিতে সারাদেশে কর্মসূচি পালিত হলেও কেন্দ্রীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে ফুলবাড়ীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পড়ে অনুষ্ঠিত হবে ওই সমাবেশ।
সকালে শহীদদের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পনের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হবে। বিগত ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লাখনি প্রকল্প বাতিলসহ ৩ দফা দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশ করছিল ফুলবাড়ীর সকল শ্রেণী পেশার মানুষ।
শান্তিপূর্ণ এই বিক্ষোভে অতর্কিতভাবে পুলিশ-বিজিবি (বিডিআর) গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই মারা যায় ৩ জন। আহত হয় ২ শতাধিক নিরীহ মানুষ। তবে তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ, বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির জাতীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বলছেন মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেক বেশী। অনেক লাশ পুলিশ-বিজিবি গুম করেছে। আজও অনেকেই নিখোঁজ রয়েছে। আর নিখোঁজ মানুষগুলোর সন্ধান কোনভাবেই মিলছে না। ওইদিন পুলিশ-বিজিবির গুলিতে যে ৩ জনের লাশ মিলে সেই শহীদ ব্যক্তিরা হলেন আলামিন, সালেকিন ও তরিকুল।
তাদের স্বজনরা আজও আহাজারী করছে। আহতরা চিকিৎসার অভাবে চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করছে। প্রতিবছর ২৬ আগস্ট এলে ফুলবাড়ীর মানুষের হৃদয়ে কালো অনামিষার ছায়ায় ঢেকে যায়। সেই দিনের স্মৃতি স্বজনহারাদের কাঁদিয়ে ফিরে। ২৬ আগস্ট ফুলবাড়ীবাসীর কালো অধ্যায়ের দিন।
এদিনটি ইতিহাসের পাতায় লেখা না হলেও বংশপরম্পরায় মানুষের হৃদয়ে গ্রন্থথিত হয়ে থাকবে বলে স্বজন হারা ও পঙ্গুত্ব বরণকারী মানুষরা জানায়। সেইদিনের ৩ দফা দাবির সঙ্গে যুক্ত হয় আরো ৩ দফা। এই ৬ দফা দাবির প্রথম দফা হলো এশিয়া এনার্জির সঙ্গে সকল চুক্তি বাতিল করে বাংলাদেশ থেকে তাদের বিতাড়িত করতে হবে। বাংলাদেশের কোথায় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লাখনি করা চলবে না। দ্বিতীয় দফা হলো ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট পুলিশ-বিজিবির গুলিতে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও আহতদের পূর্ণ চিকিৎসা এবং তাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দিতে হবে।
তৃতীয় দফা দাবি হলো নিরীহ, নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ জনতাকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা ও আহত করা হয়েছে সেই ঘটনার বিচার ও দায়িদের দিতে হবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। চতুর্থ দফা হলো যেসব মানুষকে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়েছে সেইসব লাশ ফেরত দিতে হবে এবং যাদের আজও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাদের খুঁজে বের করতে হবে। পঞ্চম দফা হলো নিহতদের নামে নতুন ব্রীজের পাশে সরকারি উদ্যোগে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করতে হবে। শেষ দফা অর্থাৎ ষষ্ঠ দফা হলো পুলিশ-বিজিবি কর্তৃক স্থানীয় জনগনের স্থাবর অস্থাবর সম্পদের ক্ষতি ও লুটপাট করা হয়েছে, দিতে হবে সেই ক্ষতিপূরণ। একই সঙ্গে এশিয়া এনার্জির চিহ্নিত দালালদের গ্রেফতার করতে হবে। এমনকি কয়লাখনি বিরোধী যে সকল নেতাকর্মীর নামে হয়রানিমূলক মামলা করা হয়েছে তা প্রত্যাহারসহ নতুন করে মামলা বা জিডি করা হবে না, সরকারকে এই ঘোষণা দিতে হবে বলে সংগঠন সূত্রটি আগামী নিউজকে জানিয়েছে।
তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ, বিদ্যুৎ, বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতা ও বাংলাদেশ ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন নান্নু আগামী নিউজকে বলেন, সেই সময়ে ফুলবাড়ীর ঘটনাকে ঘিরে ৪ সেপ্টেম্বর ফুলবাড়ীতে ১৪ দলের মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিলো।
ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন সে সময়ের বিরোধী দলীয় নেতা আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন তিনি মহাসমাবেশ থেকে হুংকার দিয়ে বলেছিলেন তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ, বিদ্যুৎ, বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির দেয়া ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নের। এর ব্যতয় ঘটলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিবে। কমরেড নান্নু আরো বলেন সে সময়ে বিরোধদলের নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই ১৩ বছর ধরে সরকার পরিচালনা করে আসছে। অথচ শ্রমজীবী মানুষের বাঁচা ও দেশরক্ষার ৬ দফা দাবি তিনি নিজেও বাস্তবায়ন করছেন না।
আর এ দাবি আদায়ে আমরা ১৭ বছর ধরে আন্দোলন করছি। এতে করে দেশবাসীর পরিস্কার ধারণা হয়েছে শেখ হাসিনা আর খালেদা জিয়া নামেই শুধু আলাদা, তারা প্রতিনিধিত্ব করে দেশীয় লুটেরা ও বিদেশী প্রভুদের। তারা কাজে ও নীতিতে এক। এরা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। তাই সময় এসেছে তাদের চিহ্নিত করার। এখন থেকে আওয়াজ তুলতে হবে আর না হাসিনা আর না খালেদা। এবার সরকার গঠন করবে শ্রমজীবী জনতা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে ফুলবাড়ীর সমাবেশে আনু মুহাম্মদসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন।