কেঁচো সারেই ভাগ্য ফিরেছে ফরিদপুরের তানিয়ার

সুমন ইসলাম, ফরিদপুর প্রতিনিধি আগস্ট ২৫, ২০২১, ০১:০৯ পিএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

ফরিদপুরঃ কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন ফরিদপুরের তানিয়া পারভীন। তানিয়ার উৎপাদিত সারের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। তার উৎপাদিত সারের গুনগত মান ভালো হওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের চাহিদা পুরন করে এখন দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকদের চাহিদা পুরন করছে। জেলার বাইরে সার যাচ্ছে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে।

এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় ট্রাককে ট্রাক সার যাচ্ছে প্রতিদিন। প্রতি মাসে উৎপাদন করছেন ৩ থেকে ৪ টন সার। সার বিক্রি করে প্রতি মাসে আয় করছেন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। সার উৎপাদন করে হয়েছেন স্বাবলম্বী। তার খামারে কাজ করে তিন জন নারীও ভালো আছেন।

তানিয়া একাই স্বাবলম্বী হননি, অনেক নারীকেও করেছেন স্বাবলম্বী। তানিয়ার সাফল্য দেখে, অন্য নারীরাও তানিয়ার থেকে পরমর্শ নিয়ে গড়ে তুলেছেন কেঁচো সারের খামার। তারাও এখন তানিয়ার মতো সার উৎপাদন করছেন এবং বিক্রয় করে স্বামী সংসার নিয়ে ভালোই আছেন। তানিয়া পারভীন ফরিদপুর পৌরসভার শোভাররামপুর মহল্লার বাসিন্দা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ২০১৭সালে ৩টি রিং স্লাব দিয়ে শুরু করেন কেঁচো সার উৎপাদন। ধীরে ধীরে সার উৎপাদনের পরিধি বাড়িয়েছেন।

এখন রিং স্লাবে সীমাবদ্ধ নেই এই উদ্যোক্তার। বাড়ির আঙ্গিনায় বিশাল টিনের সেড় ও আরেক পাশে ছাপড়া বানিয়ে তৈরি করেছেন ২৬টি হাউজ (চৌবাচ্চা)। প্রতিটি হাউজ ৪ ফুট বাই ১০ ফুট আকারের। 

প্রতিটি হাউজে ৪০মন গোবর, শাকসবজির উচ্ছিষ্টাংশ ও কলাগাছ টুকরা টুকরা করে কেটে মিশ্রণ করে প্রতিটি হাউজে ১০কেজি কেঁচো ছেড়ে দেয়া হয়। তারপর চটের বস্তা দিয়ে হাউজ ঢেকে রাখা হয়। এভাবে এক মাস ঢেকে রাখার পর তৈরী হয় কেঁচো সার।

এইভাবে প্রতি মাসে ২৬টি হাউজ থেকে তিন থেকে চার টন সার উৎপাদন করে থাকেন এই নারী উদ্যোগতা। উৎপাদিত সারের গুনগত মান ভালো হওয়ায়, স্থানীয় চাষিরা রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ব্যবহার করতে শুরু করেন তানিয়া পারভীনের কেঁচো সার।

তানিয়া পারভীনের কেঁচো সার শুধু ফরিদপুর জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে। দেশের বিভিন্ন জেলার চাষীরা কুরিয়ারে করেও সার নিচ্ছেন। ঢাকার শেওড়া পাড়ার জোহরা খানম তার বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন ফুল, ফল ও সবজির বাগান। তানিয়া পারভীনের কেঁচো সারের কথা জানতে পেরে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সার নিয়ে নিজের বাগানে ব্যবহার করেছেন।

জোহরা বেগম বলেন, আগে আমি ঢাকা থেকে ৫০টাকা কেজি সার কিনে বাগানে ব্যবহার করেছি। পরে সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারি ফরিদপুরের তানিয়া পারভীনের কেঁচো সারের কথা। তানিয়ার থেকে সারা এনে বাগানে ব্যবহার করছি। সারের গুনগত মান অনেক ভালো, দামেও কম ১৫টাকা কেজি।

আমি এখন নিয়মিত তানিয়া পারভীনের সার আমার বাগানে ব্যবহার করবো। আমি নিজেও তানিয়া পারভীনের সারের খামার দেখতে যাবো। আমি এখন থেকে তানিয়া পারভীনের কেঁচো সার ব্যবহার করবো।

তানিয়া পারভীন প্রতি কেজি সার খুচরা ২০ টাকা ও পাইকারি ১৫টাকা বিক্রয় করছেন। এতে খরচ বাদে প্রতি মাসে আয় করছেন ৩০ থেকে ৩৫হাজার টাকা। কেঁচো সার দিয়ে শুধু তানিয়া পারভীনই নয়, তানিয়ার সাফল্য দেখে শুরু করেছেন আবেদা বেগম, নুরজাহান, তানিয়া শিকদারসহ অনেকেই। অনেকে নতুন করে কেঁচো সার তৈরীর কথা ভাবছেন।

কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তানিয়া বেগমের কেঁচো সার নিয়েছে হবিগঞ্জের দেবাশীষ রায়।

উদ্যোক্তা তানিয়া পারভীন বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় প্রথমে স্বল্পপরিসরে শুরু করি কেচোর সার উৎপাদন। প্রথমত নিজের জমিতে প্রয়োগ শুরু করে সফলতা পাই। এর পর এলাকার চাষিদের মাঝে সার সরবরাহ করতে থাকি। এলাকার চাষিরা সার ব্যবহার করে অধিক ফলন ও কম খরচে ফসল ও সবজি উৎপাদন করতে পেরে তারাও খুশি। এরই মধ্যে সারের চাহিদা বাড়তে থাকায়। বড় পরিসরে শুরু করেছি।

আগে একাই সব কাজ করতাম। এখন আমার খামারে নিয়মিত ৩জন নারী কাজ করে ভালো আছে। অনেক নারী আর থেকে সহযোগীতা নিয়ে সার উৎপাদন শুরু করেছে। আমার সারা এখন জেলার কৃষকদের চাহিদা পুরন করে, দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকদের চাহিদা পুরন করছে। আমি এখন সার দিয়ে সারতে পারি না। উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেশী। সরকারী সহযোগিতা পেলে আমি আরো বড় পরিসরে সার উৎপাদন করতে পারবো।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার (জি এম)মোঃ গোলাম হাফিজ বলেন, তানিয়া পারভীন আমাদের কাছে সাহযোগীতা চাইলে তাকে আমরা সব ধরনের সাহয্য সাহযোগীতা করা হবে।