জেলা শহর থেকে প্রায় ১২ মাইল উত্তরে কাহারোল উপজেলার দিনাজপুর-তেতঁলিয়া
মহাসড়কের প্রায় এক মাইল পশ্চিমে ঢেপা নদীর পারে শান্তনিভৃতগ্রামে ঐতিহাসিক প্রাচীন পোড়ামাটির টেরাকাটা শিল্পকর্মের নিদর্শন কান্তজিউ বা কান্তজী মন্দিরের অবস্থান। এই অঞ্চলে কান্তনগর হিসেবে বেশ সুপরিচিত।
ঐতিহাসিক কান্তজিঊ/কান্তনগর প্রাচীন এই মন্দিরটি হিন্দু ধর্মের কান্ত বা কৃষ্ণের নামে নামাঙ্কিত। হিন্দুদের পূর্ণ স্থান হিসেবে প্রতি বছর রাস পূর্নিমায় লক্ষ লক্ষ পূনার্থীর সমাগমে মাস ব্যাপী বসে রাসমেলা। প্রতিদিন দেশ ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে পোড়ামাটির নান্দনিক শিল্পকর্মের ঐতিহাসিক এই মন্দির দর্শনে। আত্মতৃপ্তি আর মুগ্ধতার স্বাদ গ্রহণ করার জন্য।সারা বছরই চলে নিত্য অন্ন ভোগ আর কোন না কোন আচার অনুষ্ঠান।
বর্তমানে স্থানীয় সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল (এম পি) মন্দিরের উন্নয়ন সাধনে বেশ ভুমিকা রেখেছেন। মন্দিরের বাহির প্রাঙ্গনে অনেক অবকাঠামো আর দুরদুরান্তের দরশনার্থীদের রাত্রি যাপনে পর্যটন মোটেল সহ নানা উন্নয়ন সাধন করেছেন। যা অত্যাধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে অগ্রগন্য।
প্রাচীন এই কান্তনগর মন্দির নির্মানের ইতিহাসঃ
মহারাজ প্রাণনাথ ১৭২২ সালে মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন এবং স্ত্রী রুকমিনির আদেশে পিতার ইচ্ছা পূরণে দত্তকপুত্র রাজা রামনাথ ১৭৫২ সালে মন্দিরের নির্মাণ সম্পন্ন করেন। তিন তলা বিশিষ্ট মন্দিরের পিরামিড আকৃতির তিনটি ধাপে উপরে উঠে গিয়ে প্রতি ধাপের কোণগুলির উপরে মোট নয়টি অলংকৃত শিখর বা রত্ন ছিল যা দেখে মনে হবে যেন একটি উচুঁ ভিত্তির উপর প্রকান্ড অলংকৃত রথ দাঁড়িয়ে। মন্দিরের চারদিকে খোলা খিলান পথ রয়েছে যাতে যে কোন দিক থেকেই পূজারীরা ভেতরের পবিত্র স্থানে রাখা দেবমূর্তিকে দেখতে পাওয়া যায়।
মন্দিরের চারপাশের সম্পূর্ন দেয়াল জুড়ে দৃষ্টিনন্দন পোড়ামাটির তৈরী টেরাকোটা রামায়ণ,মহাভারত আর নানা পৌরাণিক কাহিনীর চিএ।মন্দিরের চারদিকের সবগুলো খিলান দিয়েই ভেতরের দেবমূর্তি দেখা যায়। মন্দির প্রাঙ্গণ আয়তাকার হলেও,পাথরের ভিত্তির উপরে দাঁড়ানো ৫০ ফুট উচ্চতার মন্দিরটি বর্গাকার। নিচতলার সব প্রবেশপথে বহু খাঁজযুক্ত খিলান রয়েছে। দুটো ইটের স্তম্ভ দিয়ে খিলানগুলো আলাদা করা হয়েছে, স্তম্ভ দুটো খুবই সুন্দর এবং সমৃদ্ধ অলংকরণযুক্ত। মন্দিরের পশ্চিম দিকের দ্বিতীয় বারান্দা থেকে সিঁড়ি উপরের দিকে উঠে গেছে। মন্দিরের নিচতলায় ২১টি এবং দ্বিতীয় তলায় ২৭টি দরজা-খিলান রয়েছে, তবে তৃতীয় তলায় রয়েছে মাত্র ৩টি করে।
বর্তমান ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে ভূমিকম্পে মন্দিরটি ক্ষতিগ্রস্থ হলে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে রাজা গিরিজানাথ বাহাদুর ধ্বংস হয়ে যাওয়া নয়টি শিখর বাদে মন্দিরটির ব্যাপক পুনর্গঠন করেছিলেন।
তবে জন হেনরি ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দিরের নয়টি রত্ন সহ তোলা ছবিতে আসল স্থাপনার চিত্র মন্দিরের তথ্য ভান্ডারকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।