মানিকগঞ্জঃ জেলার হরিরামপুর উপজেলার গোপীনাথপুর পালপাড়া গ্রামের তপন পাল (২৪)। নিজের হাতের সুনিপুণ যত্মদক্ষতায় মাটির তৈরি শোপিসে তিনি ফুটিয়ে তোলেন আবহমান গ্রাম বাংলার বিভিন্ন চিত্র। কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই ভাস্কর্য তৈরি করতেও পারেন তিনি। তাঁর এমন শিল্পকর্মে মুগ্ধ এলাকাবাসী।
তপন পাল উপজেলার গোপীনাথপুর পালপাড়া গ্রামের হরিপদ পালের ছেলে। চার বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে তপনই সবার ছোট।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে গোপীনাথপুর পালপাড়া গ্রামে তপন পালের বাড়িতে ঢুকতেই চোখে পড়ে। বাড়ির উঠোনে বসে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য তৈরি করছেন তিনি। ঘরের বারান্দাজুড়ে রয়েছে মাটির তৈরি বিভিন্ন শোপিস। যেমন, শিশুকে দু'পায়ের উপর শুইয়ে গায়ে তেলে মেখে দিচ্ছেন মা। বাঁনর কাঁধে বানরের খেল দেখানো মাদারি কিংবা গায়ের কৃষকের পালিত গাভীর দুধ দোয়ানো।
তপন পাল জানান, তিনি ২০১৫ সালে মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। সংসারে আর্থিক অনটনের কারণে লেখাপড়া আর চালিয়ে যেতে পারেননি।
ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছেন পরিবারের সদস্যদের মাটির বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করতে। পরিবার থেকেই মাটির কাজ শিখলেও তার ইচ্ছে ছিলো একটু এগিয়ে। মাটির বিভিন্ন শোপিস তৈরিসহ ভাস্কর্যের প্রতি ছিলো টান। সেই থেকেই শুরু। ভাস্কর্য তৈরির কোন শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ ছাড়াই নিজের ইচ্ছাশক্তির বলেই ভাস্কর্য গড়ছেন তিনি।
তপন পাল বলেন, গত কয়েকবছরে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ আট থেকে নয়টি ভাস্কর্য বানিয়েছেন। তার দাবি তাকে যে কারো ছবি দিলেই, তিনি তার ভাস্কর্য তৈরি করে দিতে পারবেন।
তবে, এলাকায় তার এমন প্রতিভা বিকশিত হওয়ার সুযোগ কম বলে মনে করেন তপন। তিনি বলেন, এলাকায় এসবের চাহিদা নেই। দেশের অনেক জায়গায় অনেক ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়। অামি যদি সুযোগ-সহযোগিতা পাই, তাহলে হয়তো একদিন আমিও তেমন ভাস্কর্য নির্মাণ করতে পারবো।
বংশীয় পেশায় ছেলে একধাপ এগিয়ে যেতে পেরেছে বলে খুশি তপনের বাবা হরিপদ পাল। তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই তপনের বিভিন্ন শোপিস ও ভাস্কর্য তৈরির ঝোঁক ছিলো। এখন কারও ছবি দিলেই তপন তার ভাস্কর্য বানিয়ে দিতে পারবে। তবে, আর্থিক সমস্যার কারণে তপনের এমন প্রতিভা বিকাশের বড় সুযোগ নেই বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, "তপন যদি আরও সুযোগ ও সহযোগিতা পায়, তাহলে অনেকদূর যেতে পারবে।"
তপনের বোন চাম্পা রানী পাল বলেন, বংশ পরম্পরায় আমাদের সবাই হাড়ি-পাতিলসহ মাটির বিভিন্ন তৈজসপত্র ও বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি তৈরি করে আসছে। তপন বিভিন্ন শোপিস সহ ভাস্কর্যও তৈরি করতে পারে। এমনকি কারো ছবি দিলে, তা দেখেই তার ভাস্কর্য বা মূর্তি বানাতে পারে। দিন দিন মাটির তৈজসপত্রের ব্যবহার কমে যাচ্ছে। বাপ-দাদার দীর্ঘদিনের পেশা এখন প্রায় বিলুপ্তির মুখে। ভাস্কর্য তৈরি তপনের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান হতে পারে। এতে বাপ-দাদার পেশাটাও টিকে থাকবে। সুযোগ-সহযোগিতা পেলে তপন হয়তো অনেক উন্নতি করতে পারবে। এজন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
তপনের বড় বৌদি সুমা রানী পাল বলেন, তপনের বাবা ও অন্য দুই ভাই তৈজসপত্র ও মূর্তি তৈরি করলেও ভাস্কর্য তৈরির কাজ পারেনা। তপনের হাতের কাজ অনেক ভালো। অনেকেই ওর কাজ দেখতে আসে।
তপনের প্রতিবেশী মো. নিফাজদ্দিন শেখ এসেছিলেন তপনের ভাস্কর্য তৈরি দেখতে। তার মতো এলাকার অনেকেই তপনের কাজ দেখতে আসে বলে জানান তিনি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, "তপনের হাতের কাজ অনেক ভালো। আমাদের ভালোই লাগে। ও যে কাজ করে এই কাজ এখানে হয়না।"