মো. মিজানুর রহমান, পটুয়াখালী প্রতিনিধি
আগস্ট ৭, ২০২১, ০২:২০ পিএম
ফাইল ফটো
পটুয়াখালীঃ ভূত তাড়ানোর নামে এক গৃহবধূকে (২২) জোর করে ছাই, গোবর ও হুইলের গুঁড়া খাইয়ে পানিতে চুবালেন গান্ধি দাস নামে এক কবিরাজ। এতে গৃহবধূ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে গুরুতর অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে পটুয়াখালী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের হাজিখালী গ্রামের কবিরাজ গান্ধি দাসের বাড়িতে আটকে রেখে গৃহবধূকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে বলে জানায় পরিবার। ভুক্তভোগী গৃহবধূ সদর উপজেলার বিঘাই ইউনিয়নের বাসিন্দা।
গৃহবধূ বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য গান্ধি দাস কবিরাজের কাছে যেতে চাইনি। আমার বাবা নিয়ে গেছেন। ভুলটা বাবার। তিনি বুঝতে পারেননি কবিরাজ এভাবে নির্যাতন করবে। গান্ধি দাস ও তার ছেলে রিপন দাস আমাকে ঝাড়ু দিয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পিটিয়েছে। লাঠি দিয়ে মারধর করেছে। লাঠির আঘাতে শরীরের বিভিন্ন স্থান ফুলে গেছে। নির্যাতন সইতে না পেরে পালিয়ে যেতে চেয়েছি। এরপর পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে কবিরাজ।’
তিনি বলেন, ‘আমাকে ছাই, গোবর ও হুইলের গুঁড়া খাইয়েছে কবিরাজ। খেতে চাইনি। তখন চুলের মুঠি ধরে মাটিতে ফেলে মারধর করেছে। এরপর চুলের মুঠি ধরে বিলে নিয়ে পানিতে চুবিয়েছে। আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পতে চিৎকার দিয়ে সাহায্য চেয়েছি। কেউ উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেনি। খবর পেয়ে আমার বাবা এসে উদ্ধার করেছেন। এরপর হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।’
গৃহবধূর ফুফু বলেন, ‘আড়াই মাস আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে ভাতিজি। চিকিৎসার জন্য গান্ধি দাসের কাছে নিয়ে যাই। অবস্থা দেখে গান্ধি দাস জানায়, ভূতে ধরেছে। ভূত তাড়াতে হলে তিনটা কালো ছাগল, সোয়াশের চাল, সোয়াশের মিঠাই, চারটা নারকেল, হলুদ শাড়ি একটি, লাল গামছা একটি, আগরবাতি এক প্যাকেট, মোমবাতি চারটি ও ধূপ ২০০ গ্রাম লাগবে। সেই সঙ্গে ১৫ হাজার টাকা হাদিয়া দিতে হবে। তাহলেই ভূত তাড়িয়ে সুস্থ করে দেবে। মেয়ে সুস্থ হওয়ার আশায় আমার ভাই রাজি হন। টাকা ও উপকরণ দেওয়ার পর শুরু হয় চিকিৎসার নামে নির্যাতন। নির্যাতনের পর পানিতে চুবানো হয়। গোবর ও হুইলের সাবানের গুঁড়া খাওয়ানো হয়। এতে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি।’
গৃহবধূর বাবা বলেন, ‘মেয়েকে সুস্থ করার কথা বলে নির্যাতন করেছে কবিরাজ ও তার ছেলে। তার বাড়িতে মেয়েকে রেখে আসা আমার ভুল হয়েছে। তার বাড়ি গিয়ে দেখি শিকল দিয়ে মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখেছে। আগের চেয়ে অসুস্থ হয়ে গেছে মেয়ে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কবিরাজ গান্ধি দাস বলেন, ‘আমি নির্যাতন করিনি। সুস্থ করতে চিকিৎসা করেছি। এটাই চিকিৎসা পদ্ধতি। চিকিৎসা শুরুর আগে মেয়ের বাবাকে সব বলেছিলাম।’
পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার মোর্শেদ বলেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ থানায় অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে কবিরাজের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।