উত্তরাঞ্চলে সরকারি মূল্যের দ্বিগুণ দাম দিয়েও মিলছে না টিএসপি সার

জিকরুল হক, উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি আগস্ট ৫, ২০২১, ০১:২২ পিএম
ফাইল ফটো

রংপুরঃ উত্তরাঞ্চলের বাজারে মিলছে না টিএসপি সার। কৃষকরা এই সার পেতে হন্যে হয়ে খুঁজছে। সরকারি মূল্যের দ্বিগুণ দাম দিয়েও মিলছে না। আমনের চারা রোপণের ভর মওসুম চলছে। বৃষ্টির পানি আশানুরুপ না থাকায় অনেক কৃষক স্যালো মেশিন দিয়ে ভূ-গর্ভস্থ পানি তুলে আমন ধান চাষের চেষ্টা করছেন। তবে মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে টিএসপি সার। কৃষকরা চারা রোপণের আগে এই সার জমিতে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছে। এ রাসায়নিক সার প্রয়োগে ধানের ফলন বেশ ভালো মিলে।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন টিএসপি সার চারা রোপনের আগে জমিতে দিলে ধান গাছ পুষ্ট হয়। ফলন হয় অনেক বেশি। ফলন বৃদ্ধিতে টিএসপি সার সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্রতি বস্তা টিএসপি সারের সরকার নির্ধারিত মূল্য ১ হাজার টাকা। কিন্তু এই সংকট মুহূর্তে প্রতি বস্তা সার খোলা বাজারে গোপনে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকা। বাড়তি মূল্যে দিয়েও টিএসপি সারের নাগাল পাচ্ছেন না অনেক কৃষক।

কৃষি অধিদপ্তর রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক বিধু ভূষণ রায় এবং ড. মাহবুবার রহমান জানান, আমন চাষের এবারে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ লাখ ৯ হাজার ৭৬১ হেক্টর জমি। এর মধ্যে রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় ৬ লাখ ১২ হাজার ৪৫১ ও দিনাজপুর অঞ্চলের ৩ জেলায় ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৩১০ হেক্টর জমি আমন চাষের আওতায় রয়েছে। আমনের আওতাধীন জমির হিসাব মতে টিএসপি সারের প্রয়োজন কমপক্ষে ৬০ হাজার মেট্রিক টন।

কিন্তু বিএডিসি’র (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন) রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলের দেয়া তথ্যমতে, টিএসপির মজুদ আছে ১৫ হাজার ৫৬৩ মেট্রিক টন। যা চাহিদার তুলনায় সিকি ভাগ।

বিএডিসির দিনাজপুর অঞ্চলের যুগ্ম পরিচালক মোসাব্বের হোসেন জানান, তাদের টিএসপির মজুদের পরিমাণ ৮ হাজার ৫৬৩ মেট্রিক টন আর রংপুর অঞ্চলের যুগ্ম পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন ৭ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সারের মজুদের কথা বলেন।

চাহিদার তুলনায় টিএসপির সরবরাহ কম থাকার বিষয়ে দিনাজপুর ও রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকদ্বয় আগামী নিউজকে বলেন, টিএসপি সারের বিকল্প হিসেবে ড্যাপ (ডিএপি) ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কৃষকদের। এতে করে টিএসপির চাহিদাও যেমন পূরণ হবে, ঠিক তেমনি বাড়তি সার হিসেবে মিলবে ইউরিয়া। এর ফলে কৃষকের চাষাবাদের খরচ অর্ধেকের কাছাকাছি আসবে। কৃষক হবে লাভবান। কিন্তু টিএসপির দামও বেশি। আবার এ সার জমিতে দেয়ার পর আমনের চারা বড় হলে বাড়তি দিতে হয় ইউরিয়া সার। ফলে খরচ অনেক বেশি পড়ে।

তাদের মতে, খুচরা বাজারে ১ কেজি টিএসপি সারের বাজার মূল্য ২২ টাকা। অথচ ডিএপি সারের প্রতি কেজির দাম ১৬ টাকা। কৃষকরা টিএসপি সারের বিকল্প অন্যকিছু ভাবছে না এমন প্রশ্ন করা হলে তারা আগামী নিউজকে বলেন এসব বিষয়ে কৃষকদের সচেতনতা বাড়াতে কৃষি দপ্তর বিরামহীন ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

কথা হয় আব্দুল মজিদ, শাহজাহান, নূরুল আমিন, ফরতাজ, তৈমুর, খলিলসহ একাধিক কৃষকের সাথে। তারা বলেন আমরা দীর্ঘদিন ধরে ফসলের গাছ হৃষ্টপুষ্ট ও আশানুরুপ ধানের ফলনের জন্য টিএসপি সার ব্যবহার করে আসছি। ভর মওসুমে কৃষি কর্মকর্তারা ডিএপি সার জমিতে প্রয়োগের কথা বলছেন। তাদের এমন পরামর্শে আস্থা রাখা একটু কষ্টকর হয়ে উঠছে। কৃষকরা বাড়তি মূল্যে বেশি খরচেই টিএসপি সারই ব্যবহার করতে চাইছে। কৃষকরা আশংকা করছেন টিএসপি সার জমিতে দিতে না পারলে ধানের ফলনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

টিএসপি সারের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে একাধিক সার ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন সরকার করোনা সামাল দিতে গিয়ে টিএসপির আমদানি না করায় বাজারে সরবরাহ চাহিদার তুলনায় অনেক কম। সে কারণে দেশি টিএসপিসহ আমদানিকৃত টিএসপি’র দামও বেড়ে গেছে। দেশি টিএসপির প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) দাম বেড়েছে ১ হাজার টাকা এবং মরক্কো টিএসপির দাম বেড়েছে বস্তা প্রতি ৩৫০ টাকা। বর্তমানে দেশি টিএসপি প্রতি বস্তা ২ হাজার ও মরক্কো টিএসপির বাজার মূল্য প্রতি বস্তা ১ হাজার ৩৫০ টাকা।

টিএসপি সারের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় কৃষি অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক বিধু ভূষণ রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।