কুমিল্লা নবাব বাড়ী- এ জেলার গৌরব

গাজী জাহাঙ্গীর আলম জাবির, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি আগস্ট ৪, ২০২১, ১১:৫৫ এএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

কুমিল্লাঃ শহরের অন্যতম নান্দনিক স্থাপনা কুমিল্লা নবাব বাড়ী। এটি শহরের প্রাচীন মুসলিম আবাসগুলির একটি। এ বাড়ীর পরতে পরতে রয়েছে সমৃদ্ধ এক অতীতের গল্প। কসবা শাহপুরের সৈয়দ বাড়ীর সৈয়দ জুলফিকার হায়দার এর পুত্র সৈয়দ বশরত আলী কুমিল্লা শহরের চর্থা এলাকায়  এসে আবাস গড়েন। তিনিই  এই ঐতিহাসিক বাড়ীটির নির্মাতা। তাঁর আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটলে ১৮৭৮ সনে তিনি এ বাড়ীর নির্মাণ  করেন।

তখন এটি একতলা ছিলো। পরবর্তীতে ১৯০৮ সনে তদীয় পু্ত্র নবাব হোচ্ছাম হায়দার বাড়ীর বর্তমান অবয়বটি নির্মাণ করেন। বাড়ীটির নির্মাণশৈলী প্রশংসনীয়।নান্দনিক এ বাড়ীর সীমানা সারে চার একর বা বারো বিঘা। মূল বাড়ীটি  একতলায় ৪৮০০ দোতালায় ৪৮০০ বর্গফুট মিলে মোট ৯৬০০ বর্গফুট। মূল বাড়ীর বাইরে একটি কাঁচারী ঘর এবং অন্যান্য কিছু আনুষাঙ্গিক ঘর রয়েছে।  চতুর্দিকে দেয়াল ঘেরা বাড়ির পশ্চিম অংশে একটি পারিবারিক কবরস্থান রয়েছে। সম্মুখে নবাববাড়ীর নাম না থাকলেও বাড়ীর গেইটে কলেমা পাক এবং পবিত্র কোরআন পাকের বাণী লিপিবদ্ধ  রয়েছে।

নবাব হোচ্ছাম হায়দারের সময় নীচে ১০ টি এবং উপরে ৮ টি কক্ষ ছিলো। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় কিছু পরিবর্তন এসেছে। হোচ্ছাম হায়দার দোতালায় থাকতেন। দোতালার হলরুমে দেশী-বিদেশী জ্ঞানী -গুনী অনেক মেহমানের আগমন ঘটেছে। তাদের মধ্যে ছোটলাট থেকে শুরু করে  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্যার সলিমুল্লাহ, ত্রিপুরার মহারাজা উল্লেখযোগ্য।

এমনকি ১৮৮৯ সালে নবাব  ফয়জুন্নেসার খেতাব প্রদান  অনুষ্ঠান এ বাড়ীতেই হয়েছিল। শচীন কর্তা এই পরিবারের সদস্যদের মতো ছিলেন।

বাড়ীটিতে ৬৮ টি দরজা এবং ৪০ টি জানালা রয়েছে। শীতকালে এই বাড়ীতে যেমন শীত কম অনুভূত হয় তেমনিভাবে গরম কালেও গরমের তীব্রতা বোঝা যায়না। বাতাসের প্রবাহ সবসময় একই রকম। নবাব হোচ্ছাম হায়দারের মৃত্যুর পর তার পুত্র এহতেশাম হায়দারও খানবাহাদুর উপাধি লাভ করেন।নবাব হোচ্ছাম হায়দারের বহু জনহিতকর কাজ রয়েছে কুমিল্লায়। তন্মধ্যে কুমিল্লা সরকারী মহিলা কলেজ,হোচ্ছামিয়া স্কুল, হোচ্ছাম হায়দার ছাত্রী নিবাস, লুতফুন্নেসা স্কুল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এখানে, নবাব বাড়ীর গৌরবগাঁথার কিয়দংশ  বিধৃত হয়েছে। আরো অনেক অজানা ইতিহাস রয়ে গেছে। আমি মাত্র শুরু করলাম।
 
খেলাধুলায় এ বাড়ীর বাসিন্দাদের বিশেষ খ্যাতি রয়েছে।কুমিল্লা ক্লাবের প্রথম বিলিয়ার্ড টেবিলটি  ওসমান হায়দারের দান করা। মনসুর হায়দার জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন, রানারআপ হয়েছেন। শুধু তাই নয় তার হাত ধরে অসংখ্য খেলোয়ার তৈরী হয়েছে। ক্রিকেট মাঠেও এ বাড়ীর বাসিন্দাদের সরব উপস্থিতি ছিলো।
 
বর্তমানে নবাববাড়ীতে দর্শনীয় স্থান  গুলোর মধ্যে রয়েছে শত বছরের পুরানো ডাইনিং টেবিল, পঁচিশ কেজি ওজনের হাতির দাঁত, লোহার সিন্দুক, মার্বেল পাথরের গোলস টেবিল, নবাবী আমলের ড্রেসিং টেবিল, বৃটিশ সরকার প্রদত্ত দুটি তরবারী, বৃটিশ আমলের দেয়াল ঘড়ি, খান বাহাদুর ও নবাব উপাধির মেডেল ও বড়লাটের স্বাক্ষর করা সনদ ইত্যাদি।
 
নবাববাড়ী কুমিল্লার গৌরবময় অতীতের স্বাক্ষী বহন করে। মুসলিম সমাজ তথা কুমিল্লাবাসীর গৌরবগাঁথার নিদর্শন হিসেবে নবাববাড়ী  আজও সগৌরবে মাথা তুলে দাড়িয়ে আছে। এর সংরক্ষণ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।