বাঘাইছড়িতে ব্রিজের অভাবে পাঁচ গ্রামের হাজারো মানুষের কান্না

নিউটন চাকমা, রাঙামাটি জেলা প্রতিনিধি আগস্ট ৩, ২০২১, ১২:০২ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

রাঙামাটিঃ জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলী এলাকায় সেতু, কালভার্ট কিংবা ব্রিজের অভাবে দিনের পর দিন ও বছরের পর বছর জনদূর্ভোগে শত শত পরিবারের কান্নাকাটি করছেন।

স্থানীয়দের সুত্রে জানাগেছে, বাঘাইছড়ি উপজেলা সদর প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বঙ্গলতলী ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের পাঁচশত পরিবারের অধিক চলাচলের একমাত্র মাধ্যম এ ভাঙ্গা কাঠের তৈরী সেতুটি। এটি কাচালং নদীর তীরে পাহাড়ি ছড়ার উপর আনুমানিক ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের কাঠের সেতু তৈরী করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা এ কাঠের তৈরী সেতুর রাস্তা দিয়ে নিয়মিত যাতায়াতের পাশাপাশি এলাকার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এ সেতুটি।

সুত্রে জানাগেছে, কাঠের তৈরী করা এই সেতুটি স্থানীয়দের সহায়তায় ২০১৬ -১৭ অর্থ বছরে তৈরি করেন বঙ্গলতলী ইউনিয়ন পরিষদ। সেতুটি তৈরির মাধ্যমে আশপাশের পাঁচটি গ্রাম ছোটো কাট্রোলী, ডাঙ্গা ছড়া, বেতাগীছড়া, বালু খালী গ্রামের হাজারো মানুষ ইউনিয়ন পরিষদ সদরের এ মূল সড়ক দিয়ে চলাচল করেন এবং এই সড়কটি পুরো ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। পাঁচ বছরের অধিক পুরোনো এই কাঠের সেতুটি পাহাড়ের চুঁড়ায় থেকে উজানের পানি নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে গত দুই/তিবছর বছর ধরে খুবই নড়বড়ে হয়ে গেছে এ কাঠের তৈরী করা সেতুটি। এই সেতুর জন্য পুরো এলকাজুড়ে জনদুর্ভোগে পড়েছে এ পাঁচটি গ্রামের মনুষ। জীবন জীবিকার তাগিদে যাতায়াতে ঝুঁকি নিয়ে সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে থেকে শত মানুষের যাতায়াত

কাঠের সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে এলোমেলো হয়ে হেলে পড়ার আশংকাজনক অবস্থায় পারাপার হচ্ছে। তারপরও জীবনের ঝুকি নিয়ে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলে দাবী স্থানীয় বাসিন্দারা ও ইউপি সদস্য নিতিশ চাকমা

নিতিশ চাকমার মতে, সেতুটি বেশ কয়েকবার এলাকাবাসীরা যৌথ অর্থের বিনিময়ে মেরামত করেছেন। কিন্তু এ বর্ষা মৌসুমে সেতুটি খুবই ঝুঁকি পূর্ণ হয়ে পড়েছে। কারন পাহাড়ীর উজানের পানি এসে গাছ পালা ও আবর্জনা ভেসে এসে সেতুটিকে স্বজোড়ে ধাক্কা দেয়। যার কারনে সেতুটি মারাত্বক ভাবে হেলে পড়েছে এবং উজানের পানির স্রোতেই ভেঙ্গে ভেসে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। সেতুটি ভেঙ্গে বা হেলে পড়লে পুরো পাঁচটি গ্রামের হাজারো মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে উপজেলাসহ অন্যান্য এলাকার সঙ্গে

এদিকে বঙ্গলতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জ্ঞানজ্যোতি চাকমার সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমরা সেতুটির বিষয়ে বেশ কয়েকবার উপজেলাসহ দূর্যোগ মন্ত্রণালয়ে তৎবির করেছি। গত বছর ৩২ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি সেতু দেয়ার কথা থাকলেও এখনো রয়ে গেছে অগোচরে। তবে বাঘাইছড়ি উপজেলার তৎকালীন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নুরুন্নবী সরকার পরিদর্শন করতে আসেন এ সেতুটি দেখতে। তিনি সরেজমিনে পরিদর্শনে এসে বলেছেন, এখানে ৩২ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণ করলেও কোন অবস্থায় টেকসই বা দীর্ঘ দিন ঠিকবে না। সুতরাং এই সেতু নির্মাণ করতে গেলে দীর্ঘ মেয়াদীতে নির্মাণ করতে হবে। এ সেতুটি বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট নতুন ভাবে ৬৯ ফুট দৈর্ঘ্যের লম্বা সেতুর জন্য প্রস্তাব দিয়েছি। বর্ততমানে প্রকল্পটির জন্য অপেক্ষায় রয়েছি। অনুমোদন পেলে কাজ শুরুর আশ্বাস দেন বলে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন।

বাঘাইছড়ি উপজেলার নতুন  প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, সেতুটির বিষয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন এলে কাজ শুরু করার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে কখন অনুমোদন হবে তার কোন হদিস নাই বলেও জানান।

অপরদিকে এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, এ অঞ্চলের জন্য যদি সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একটু জনদুর্ভোগের কথা স্মরণ করেন তাহলে এলাকাবাসীরা উপকৃত হবে। সেতুটি যে বেহাল দশা, যেকোন সময়ে ভেঙ্গে পড়ার আশংকা করছেন। তাই উক্ত সেতুটির জন্য হাজার মানুষের কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন। এ সেতুটি অভিলম্বে প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়ে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানিয়েছেন।