ফেলে দেওয়া প্লাষ্টিকের বোতলে কর্মসংস্থান

শামীম হোসেন সামন, নবাবগঞ্জ(ঢাকা)প্রতিনিধি আগস্ট ১, ২০২১, ০২:৫৭ পিএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

ঢাকাঃ বেকার বসে না থেকে প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ আয় করেছেন বেকার যুবকরা। এতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে অনেকের। এমন উদ্যোগে সফল হয়েছেন বেকার যুবক আমিরুল ইসলাম ও মো. রানা।

একসময় বেকার থাকলেও প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করে আশার আলো দেখছেন তারা। ঢাকার নবাবগঞ্জের নূরনগর গ্রামে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বেকার যুবকরা বেকারত্ব দূর করে প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ আয় করছেন। এতে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি পরিবারে এসেছে স্বচ্ছলতা। অভাব অনটন কাটিয়ে সফলতার হাতছাতিতে স্বচ্ছলভাবে জীবন যাপন করছে।

আমিরুল ইসলাম। বসবাস পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার নাকালিয়া ইউনিয়নের চরপেচাকুলা গ্রামে। মাত্র তৃতীয় শ্রেণিতে পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। সংসারের অভাব অনটনের কারনে অল্প বয়সেই কাজে চলে যান। ৬ হাজার টাকা বেতনে দর্জি কাজ করে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি একটি সেলাই কাজের দোকানও দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে একসময় একটি দর্জির দোকান দেন। তার স্বপ্ন পূরণ হয় ঠিকই। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের পর পদ্মার যমুনা নদীর ভাঙনে বিলীন হয় তার দোকান। সফলতার হাতছাতিতে একসময় ভালো জীবন যাপন করলেও দোকান হারানোর পর বসতভিটাও যমুনা নদীর ভাঙনের শিকার। এক সময়ের স্বপ্ন যেন দেখা দিয়েছে দুঃস্বপ্ন হয়ে।

নদীতে দোকান আর বসতভিটা হারিয়ে চরম হতাশায় দিন কাটছে। একসময় কোনো উপায় না দেখে প্লাস্টিকের বোতল কুড়ানোর কাজে চলে আসেন। সেখানে প্রতি মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা আয় করছেন।

মো. রানা। বসবাস পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার নাকালিয়া ইউনিয়নের চরপেচাকুলা গ্রামে। মাত্র অষ্টম শ্রেণিতে পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। এরপর ২০১৮ সালে গার্মেন্টস কারখানায় চাকুরী করেন। সেখানে তেমন একটা সুবিধা করতে পারেননি। হঠাৎ করে চাকুরী ছেড়ে প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করার উদ্যোগ নেন। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে তার। বেকারত্ব দূরও করেছেন। পরিবারে এসেছে স্বচ্ছলতা। অভাবের সংসারে ফুটেছে হাসির ঝিলিক। তার মতো অনেকেই এখন প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করে বেকারত্ব দূর করার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।

আমিরুল ইসলাম ও মো রানা জানান, একসময় অনেকটা বেকার ছিলেন। সময়ের সাথে সাথে বেকারত্ব দূর করার জন্য বেছে নেন এই কাজ। প্রতি মাসে ১৫-২০ হাজার টাকা আয় করছেন তারা। এতে পরিবারের ভরনপোষণের খরচের পাশাপাশি সঞ্চয়ও করতে পারছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নবাবগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রায় ৩০০ জন বেকার যুবক প্লাস্টিকের বোতল ও পরিত্যক্ত জিনিসপত্র ক্রয় করে সেগুলো ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে আয় করছেন। পরিত্যক্ত জিনিস পত্র বিক্রির পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে ভাঙারির দোকান।


স্থানীয় অনেকে বলেন, সাধারণ মানুষ বিভিন্ন পণ্য-দ্রব্য ব্যবহার করে প্লাস্টিকের বোতলগুলো ফেলে দেয়। এতে পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যেহেতেু প্লাস্টিক মাটিতে মিশে না, তাই মাটি তার উর্বরতা শক্তি হারায়। তাই পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করার ফলে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে এতে বেকারত্ব দূরীকরণে ভূমিকা রাখছে ।