ঠাকুরগাঁওয়ের রেকর্ড পরিমাণ পাট আবাদ: নায্য মূল্যের দাবী কৃষকের

শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি জুলাই ২৭, ২০২১, ০৬:২৮ পিএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

ঠাকুরগাঁওঃ জেলায় চলতি বছর রেকর্ড পরিমাণ পাট চাষ হয়েছে। উত্তরের সীমান্ত কোলঘেষা অবহেলিত জেলাগুলোর মধ্যে ঠাকুরগাঁও। জেলাটিতে বিগত কয়েক বছর পাটের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া ও বৃষ্টি না হওয়ায় খরার কারণে এ সোনালী আঁশ কৃষকদের গলার 'ফাঁস' হয়ে দাড়িয়েছিল। বাজারে পাটের দরপতন হওয়ার ফলে চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল চাষিরা।

তবে বর্তমানে দেশে পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বাড়াতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়ার ফলে আবারো সুদিন ফিরেছে কৃষকদের ঘরে। কৃষি বিভাগের তদারকিতে জেলায় চলতি বছর পাটচাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় পাটের ফলন বাম্পার হয়েছে। কৃষকরা দাম পেলে আগামীতে আরও পাটের আবাদ বাড়বে।

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের চেয়ে এ বছর জেলায় ৩০০ হেক্টরেরও বেশি জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। চলতি বছর জেলায় ৫ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো। সেখানে আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। গত বছর ৫ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিলো।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকায় ভেলাজান, রহিমানপুর, রাইপুর, আখানগর, বালীয়াডাঙ্গী, পীরগঞ্জ, হরিপুর, রুহিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও আঁশ ছাড়ানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার কৃষকরা।

সদর উপজেলার পাট চাষী রমজান আলী জানান, প্রতি বিঘা জমিতে ৮-১২ মণ পাটের ফলন পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২২’শ টাকা পর্যন্ত। গত বছর পাট ওঠার শুরুর দিকে ২২০০ থেকে ২৩০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হলেও শেষে ৫০০০-৫৫০০ পর্যন্ত বিক্রি হয়। বর্তমানে বাজারে মৌসুমের শুরুতে এভাবে পাটের দাম কম থাকে। কৃষকের গলা খালি হয়ওয়ার বাড়ে পাটের দাম। এভাবে পাটের বাজার উঠানামার ফলে কৃষকরা নায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমনটি অভিযোগ অনেক কৃষকের। তাই মৌসুমের শুরাতে পাটের প্রতিমণ পাট ৪০০০-৫০০০ টাকা করার দাবী তাদের।

স্ব-পরিবারে চিলারং ইউনিয়নের ভেলাজান নদীপাড়া গ্রামের পাকা রাস্তার পার্শ্বে জাগ দেওয়া পাটের ছাল ছাড়াচ্ছিলেন দুলাল ইসলাম। তিনি জানান, পাটচাষে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। এমন কথা শুনে এ বছর দেড় বিঘা জমিতে পাটচাষ করেছি। এতে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা।পাট কেটে আঁশ ছাড়াতে শুরু করছ্ ি। বাজারে পাটের ভালো দাম পেলে লাভবান হব।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু হোসেন বলেন, গত বছর দাম বেশি পাওয়ায় এবছর বেশি পরিমানে পাটচাষে ঝুঁকেছেন চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এই অঞ্চলে পাটের ফলন ভালো। আমরা পাটের চাষাবাদ বাড়াতে এবং ভালো ফলনে প্রতিনিয়ত পাটচাষীদের প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে পাটের উৎপাদন আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। পাট চাষে কৃষকদের ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করা গেছে। কৃষকদের পাট চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি বিভাগ থেকে সবরকম সহযোগিতা করা হচ্ছে।

এছাড়া এখন বাজারে পাটের ন্যায্যমূল্যও পাচ্ছেন চাষীরা। পাটের ভালো দাম পেলে উপজেলায় পাটের আবাদ আবারো বাড়বে। আমরা পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে নিয়ে আসব।