যশোরে চাঁদাবাজি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে যুবক খুন

বিল্লাল হোসেন,যশোর প্রতিনিধি জুলাই ২৬, ২০২১, ১১:৫৮ পিএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

যশোরঃ জেলার শহরের শংকরপুরের শাওন ওরফে টুনি শাওন হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে আরো তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। একই সাথে হত্যার কারণ উদঘাটন করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। এ নিয়ে শাওন হত্যা মামলায় মোট ৬ জনকে আটক করা হলো ।

রোববার গভীর রাতে যশোর শহরের ষষ্টিতলাপাড়ায় অভিযান চালিয়ে জেলা গোয়েন্দা ও চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা আসামিদের আটক করে। এসময় হত্যাকাণ্ডে একটি ব্যবহৃত চাকু, একটি চাইনিজ কুড়াল এবং একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। সোমবার বিকেলে ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক প্রেসবিব্রিফিংয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

আটককৃতরা হলো, শহরের শংকরপুর আশ্রম রোড এলাকার মুরগি ফার্মগেট এলাকার রবিউল ইসলাম সরদারের ছেলে ইয়াসিন হাসান রানা (২০), ঝিকরগাছা উপজেলার ইস্তা গ্রামের মৃত আব্দুল কাদের বিশ্বাসের ছেলে হাফিজুর রহমান বিশ্বাস ওরফে ভ্যাবো (৩০) এবং শংকরপুর গোলপাতা এলাকার ভাড়াটিয়া আমিন মোড়লের ছেলে জয় (১৯)।

এর আগে পুলিশ তিন আসামি শহরের শংকরপুর এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মোহাম্মদ আলী (২০), একই এলাকার মিন্টু শেখের ছেলে বিল্লাল হোসেন মৃদুল (২০) ও শংকরপুর এলাকার মৃত কটার ছেলে মানিক (২৬) কে আটক করে।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) জাহাঙ্গীর আলম জানান, নিহত শাওন ওরফে টুনির বাবা ৮ জনকে আসামি করে যশোর কোতয়লি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। হত্যাকান্ডের পরের দিনই তিনজনকে আটক করা হয়। এরপর পুলিশ সুপারের দিক নির্দেশনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইন্সপেক্টর রোকিবুজ্জামান এবং ডিবির ইনচার্জ রুপন কুমার সরকার এসআই মফিজুল ইসলাম ও এসআই শামীম হোসেনর সমন্বয়ে কোতয়ালী থানা এলাকা ও ঝিকরগাছা থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িতদের আটক করা হয়। যদিও এই তিনজনের নাম এজাহারে নেই। পুলিশ মামলার প্রাথমিক তদন্তে তিনজনের সম্পৃক্ততা পায়। মূলত স্থানীয় আধিপত্য নিয়ে বিরোধ এবং শংকরপুর বাসটার্মিনাল কেন্দ্রিক চাঁদাবাজি নিয়ো বিরোধের জেরে শাওনকে হত্যা করা হয়। এছাড়া গত বছরের জুলাই মাসে নিহত শাওন প্রধান আসামি অনিকে কুপিয়ে জখম করে। সেই হত্যাচেষ্টার প্রতিশোধ হিসাবে টুনি শাওনকে হত্যা করা হয়। স্থানীয় রাজীনিতিক পরিচয়দানকারীরা ওই সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দিয়ে থাকে।

প্রেসব্রিফিংয়ে আরো জানানো হয়েছে, রানা ষষ্টিতলা পাড়ার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকে। ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি চাকু ও একটি চাইনিজ কুড়ালসহ তাকে আটক করা হয়। পুলিশি অভিযানে সংবাদ টের পেয়ে রানা চাকুটি টয়লেটের কমোডে ফেলে দেয়। পরে তাকে দিয়েই চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। এরপর আটক ভ্যাবো ও জয়ের কথা মতো বেজপাড়া মেইন রোডের অ্যাকুরিয়াম বাবুর বাড়ি থেকে একটি ইয়ামাহা মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। আসামি ফিরোজ ওই মোটরসাইকেলটি ব্যবহার করতো।

এক প্রশ্নের জাবাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, রাজনৈতিক প্রশ্রয়দানকারীরা কারা সেটা জানার জন্য পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। একই সাথে চাঁদাবাজির ধরন কী সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে, তিন আসামিকেই সোমবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়। সেখানে আসামি রানা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহাদী হাসানের কাছে দেয়া ওই জবানবন্দিতে সে হত্যার কথা স্বীকার করেছে বলে জানাগেছে। এরপরই তিনজনকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২২ জুলাই ঈদের পরের দিন রাতে শহরের শংকরপুর জমাদ্দারপাড়া ছোটনের মোড়ে শাওনকে তাড়িয়ে কমিউনিটি পুলিশের অফিসে ঢুকে সন্ত্রাসীরা আব্দুল হালিম শেখের ছেলে শাওন ওরফে টুনি শাওনকে নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয়রা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে দেখে মৃত ঘোষণা করেন।