ঝালকাঠিঃ জেলার কাঠালিয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাসরীন আক্তারের বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণার্থীদের যাতায়াত ভাতা ৬০০০ টাকার পরিবর্তে ২৫০০/৩০০০ টাকা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে । তবে হট্রগোলের পর একজন এনএসআই সদস্যের হস্তক্ষেপে বাকি টাকা ফেরৎ দিতে বাধ্য হয়েছেন। গত ১৫ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে কাঠালিয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) সদস্য মোঃ হাফিজ। এনএসআইর জুনিয়র ফিল্ড অফিসার মোঃ হাফিজ ও প্রশিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে , মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আইজিএ প্রকল্পের ফ্যাশন ডিজাইন ও বিউটিফেকেশন কর্মসুচির ৫০ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মেয়েদের প্রত্যেকে যাতায়াত ভাতা ৬ হাজার টাকা দেয়ার কথা । কিন্তু মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার করে দিচ্ছিলেন। এ নিয়ে প্রশিক্ষানার্থী মেয়েরা চেচা- মেচি হৈচৈ করে প্রতিবাদ করেন। হৈচৈ শুনে সেখানে হাজির হন এসএসআই সদস্য মোঃ হাফিজ । তিনি তাৎক্ষনিকভাবে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাসরীন আক্তারকে প্রত্যেককে তাদের পাওনা ৬ হাজার টাকা করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। এরপর তিনি সকলকে টাকা ফেরৎ দেন এবং বিষয়টি জানা-জানি না করার জন্য এনএসআই সদস্যকে অনুরোধ জানান।
কাঠালিয়া গ্রামের বিউটিফিকেশনের প্রশিক্ষনার্থী লিমা, একই ট্রেডের পশ্চিম আউরা গ্রামের নাসরিন আক্তার জানান, নাসরীন ম্যাডাম আমাদের কাউকে ২৫০০ টাকা আবার কাউকে ৩০০০ টাকা এমনিভাবে সবোর্চ্চ ৪৯০০ টাকা দেন। কিন্তু আমাদের সকলের কাছ থেকে ৬ হাজার টাকার চেকে স্বাক্ষর নিয়েছেন। আমরা এর কারন জানতে চাইলে সে জানান, করোনার কারনে সরকার টাকা অর্ধেক দিয়েছেন, তাই তোমাদেরকে টাকা কম দিয়েছি। এ কথায় আমরা চেচা-মেচি শুরু করলে এনএসআই এর একজন স্যার এসে আমাদের কতর্নকৃত টাকা ফেরৎ দিতে বলেন ম্যাডামকে। একই টেড্রের আমরিবুনিয়া গ্রামের খাদিজা জানান, আমার প্রশিক্ষণ নিতে যাতায়াতে অটো ভাড়া খরচ হয়েছে প্রায় ৪০০০ টাকা, সেখানে আমাকে যদি ৩০০০ টাকা দেয়া হয়। তাহলে করোনাকালীন সময় এর চেয়ে বড় কষ্ট আর কি হতে পারে। উনি আমাদের গরীবদের টাকা মেরে প্রাইভেট কার রির্জাভ করে ঝালকাঠি থেকে কাঠালিয়া আসেন। মশাবুনিয়া গ্রামের ফ্যাশন ডিজাইন টেড্রের লাইজু, একই টেড্রের আমুয়া গ্রামের সম্পা ও কাঠালিয়া গ্রামের বিউটিফিকেশন টেড্রের মিমিয়া জানান, আমাদের প্রত্যেকের নামে একাউন্ট রয়েছে, সে একাউন্টের অনুকুলে ৬০০০ টাকা সরকার জমা করেছেন। টাকা উত্তোলণের জন্য মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অফিস সহকারী হোসনেয়ারা আপা ৬০০০ টাকার চেকে আমাদের স্বাক্ষর নিয়ে নিজেরাই টাকা উত্তলন করে। আমাদের কম টাকা দিয়েছেন । এনএসআই’র সদস্য মোঃ হাফিজ ভাইয়ের হস্তক্ষেপে আমরা টাকা ফেরৎ পেয়েছি।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাসরীন আক্তার ২০১৭ সালে ঝালকাঠি জেলায় প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘদিনে তিনি আইজিএ, জীবিকায়ন, ডব্লিউটিসি, ল্যাকটেটিং মাদার, মাতৃত্বকালীন ভাতা, ভিজিডি ও কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করে আয় বহিঃভূত কোটি টাকার সম্পদ বানিয়েছেন। ঝালকাঠির কলেজ মোড়ে জমি কিনে ৫তলা বিলাশ বহুল বাড়ী বানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন নামে-বেনামে সম্পদ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে ৮ম গ্রেডে ৩৪,৭২০ টাকা বেতনের চাকুরী করে প্রতিদিন ঝালকাঠি থেকে রির্জাভ প্রাইভেট কার নিয়ে কাঠালিয়ায় অফিস করছেন। নাসরীন আক্তারের বাড়ী ঝালকাঠিতে হওয়ায় এলাকার দাপট দেখিয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জিম্মি করে অনেক দুর্নীতি ও অনিয়ম করে যাচ্ছেন। অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারনে-অকারনে হয়রানি ও বকা-বকি করছেন।
উল্লেখ্য যে, নাসরীন আক্তার গত ৩০ মার্চ ২০২১ কাঠালিয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর পর থেকে তিনি এখানে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও আত্মসাৎতের রাজত্ব গড়ে তোলেন।
এ বিষয় উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (অঃ দাঃ) নাসরীন আক্তার বলেন, আমি কাঠালিয়ায় নতুন এসেছি, প্রশিক্ষনার্থীদের হাজিরা অনুযায়ী টাকা দেয়ার কথা কিন্তু আমার অফিস সহকারী হোসনেয়ারা প্রতি চেকে ৬০০০ টাকা লিখেছেন, আর প্রশিক্ষনার্থীদের টাকা কম দিয়েছেন আমি সেটা জানতাম না। তবে বিষয়টি ভুল হয়েছে। পরে বাকি টাকা প্রশিক্ষনাথীদের ফেরৎ দেয়া হয়েছে।