নারায়ণগঞ্জঃ জেলার রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস কারখানার মালিক আবুল হাসেম ও কারখানার উপ- মহাব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে মামলা করেছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) সকালে শ্রম আদালতে মামলাটি করেন শ্রম পরিদর্শক নেছার উদ্দিন আহম্মেদ।
এর আগে গত ৩০ জুন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ অফিসের সহকারী শ্রম পরিদর্শক সৈকত মাহমুদ বাদী হয়ে শ্রম আইনের নয়টি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে দণ্ডবিধির তিনটি ধারায় আরেকটি মামলা করেছিলেন।
মামলার বিষয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপমহাপরিদর্শক সৌমেন বড়ুয়া বলেন, যে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আমাদের জানাতে হয়, কিন্তু কারখানার মালিক তা করেন নি। তাই আমরা আজ একটি মামলা দায়ের করেছি। পাশাপাশি এখন আমরা ওই কলকারখানায় নিহত এবং আহত ব্যক্তিদের ক্ষতি পুরণ দিতে মালিককে বলবো। তারা যদি ক্ষতি পুরণ না দেয় তবে আমরা আরও মামলার প্রস্ততি নিবো৷
মামলায় বলা হয়, দুর্ঘটনাজনিত প্রাণহানি হলে দুই কার্যদিবসের মধ্যে ওই ঘটনা কলকারখানা পরিদর্শককে নোটিশ করে জানানোর বিধান থাকলেও হাসেম ফুডস কারখানাটি তা করেনি। এ কারণে কারখানার মালিক আবুল হাসেম ও উপমহাব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে শ্রম আইন ২০০৬–এর ৮০ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩০৭ ধারায় অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর আগে ৩০ জুন সহকারী শ্রম পরিদর্শক সৈকত মাহমুদ বাদী হয়ে করা মামলায় উল্লেখ করা হয়, করোনা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জীবাণুনাশক (সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, জীবানুনাশক স্প্রে) ব্যবহার না করা, শিশুশ্রমিক নিয়োগ, কারখানার পূর্ব দিকের ছয়তলার কক্ষে নির্মল বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা না থাকা, পরিদর্শক কর্তৃক কাজের সময়সূচির নোটিশ অনুমোদন না করা, কার্যকর সেফটি কমিটি না থাকা, যন্ত্রপাতি স্থাপনের ক্ষেত্রে দেয়াল থেকে দেয়ালের দূরত্ব এক মিটার না রাখা, অনুমোদিত নকশার সঙ্গে বর্তমান কারখানার মেশিন আউট-লেট প্ল্যানের সামঞ্জস্য না থাকা, বর্তমান শ্রমিক সংখ্যানুপাতে লাইসেন্স ক্যাটারি সঠিক না থাকা এবং ভবনের ভেতরে বৈদ্যুতিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকার বিষয়। এর মাধ্যমে কারখানাটি শ্রম আইনের ধারা-৯১ বিধি ৮৬, ধারা ৩৪ (১), ধারা ৫৬, ধারা ১১১ (৮), ধারা ৯০ (ক), বিধি-৩২৬, ধারা-৩৫৬, ধারা-৬১ লঙ্ঘন করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে শ্রম আইনের ২০০৬ অনুযায়ী দণ্ডবিধি ৩০৩, ৩০৭ ও ৩০৯ ধারায় অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সেজান জুস কারখানায় বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৫টায় আগুনের সূত্রপাত হয়। কারখানায় প্লাস্টিক, কাগজসহ মোড়কিকরণের প্রচুর সরঞ্জাম থাকায় আগুন মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে। প্রচুর পরিমাণ দাহ্য পদার্থ থাকায় কয়েকটি ফ্লোরের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিটের দীর্ঘ সময় লাগে।
আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার পর শুক্রবার (৯ জুলাই) দুপুর সোয়া একটা পর থেকে কারখানার ভেতরে থেকে লাশ বের করে আনতে থাকেন উদ্ধারকর্মীরা। এসময় ৪৯টি লাশ উদ্ধার করা হয়। এরআগে, আগুনে নিহত তিন জনের লাশসহ মোট ৫২ জনের লাশ উদ্ধার হয়। কারখানায় আগুনের ঘটনায় আরও অনেক শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করেছেন স্বজনরা। ঘটনার তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে।