যশোর হাসপাতালে হাই ফ্লো অক্সিজেন সুবিধা বঞ্চিত রোগীরা, বেড়েছে মৃত্যু

বিল্লাল হোসেন,যশোর প্রতিনিধি জুলাই ১৪, ২০২১, ১১:০৩ পিএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

যশোরঃ যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে  করোনায় আক্রান্ত রোগীরা হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার মাধ্যমে অক্সিজেন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। স্বজনরা জানিয়েছেন, রোগীদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন কম ও  প্রচন্ড শ্বাস কষ্টের পরও এই উচ্চ প্রবাহের অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে না। ফলে হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। গত ১৪ দিনে  আইসিইউ, এইচডিইউ ও রডজোন চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯৩ জন করোনাক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান জানান, অক্সিজেন সাশ্রয়ে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে না। তবে কোন রোগীর লাগলে তাৎক্ষনিকভাবে সরবরাহ করা হবে।  

জানা গেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের নিরবিচ্ছিন্নভাবে অক্সিজেন সুবিধার জন্য ২৯ জুন মঙ্গলবার চালু করা হয়েছে  ৬ হাজার লিটারের হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা অক্সিজেন প্লান্টের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। ওই সময় হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, প্রথম অবস্থায় করোনা রেডজোন ও আইসিইউতে হাইফ্লো অক্সিজেন সরবরাহ করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাস্তবে কোন ওয়ার্ডে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার মাধ্যমে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে না। এমনকি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীরাও এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় রোগীর স্বজন যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলা গ্রামের তুষার আহমেদের সাথে।

তিনি জানান, রেডজোনে চিকিৎসাধীন তার শাশুড়ি প্রচন্ড শ্বাস কষ্টে ভুগছেন। সেবিকাদের বললেও গুরুত্ব দিচ্ছেন না। কর্মচারীরা মাঝে মাঝে সিলিন্ডারের অক্সিজেন দিচ্ছেন। অক্সিজেন লাগালে স্যাচুরেশন দাঁড়াচ্ছে ৮০। খোলার পর ৭০ এর নিচে। কিন্তু তার রোগীর জন্য হাই ফ্লো অক্সিজেন সুবিধা পাননি। আরেক রোগীর স্বজন শার্শা উপজেলার পাকশিয়া এলাকার হাজের আলী জানান, হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা একেবারে দুর্বল। মানুষ বাধ্য হয়ে এখানে থাকছেন। হাই ফ্লো তো দুরের কথা  প্রয়োজনের সময় মিলছে না সিলিন্ডার অক্সিজেন। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার এক রোগীর স্বজন জানান, তার রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাঝে মাঝে ৬৫ এর নিচে নেমে আসছে। কিন্তু রোগীকে সিলিন্ডারের অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। এর জন্য মাঝে মধ্যে দায়িত্বরত কর্মচারী টাকা দাবি করেন।

রেডজোনে গিয়ে দেখা গেছে,  করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে না। সাধারণ সিলিন্ডার ও অক্সিজেন কনসেনট্রেটর যন্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। নাম ও শয্যা নম্বর গোপন রাখার শর্তে একজন রোগী জানান, নিজেদের টাকায় অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে আনতে হয়েছে। শ্বাস কষ্ট বেড়ে গেলেও হাসপাতাল থেকে ঠিকমতো সরবরাহ করা হতো না। পাঁচ মিনিট/ দশ মিনিট পর খুলে নেয়া হতো। তাই স্বজনেরা অক্সিজেন কিনে দিয়েছেন। হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার মাধ্যমে অক্সিজেন পাচ্ছেনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন সেটা আবার কি। ওয়ার্ডে মাঝে মধ্যে সিলিন্ডার অক্সিজেন পেয়েছেন। সূত্র জানায়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে যেসব রোগীর শারীরিক অবস্থা ঝুঁকির মধ্যে চলে যায় তাদের বেশিরভাগেরই দরকার হয় উচ্চমাত্রার অক্সিজেন। তার জন্য হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা অক্সিজেন ব্যবস্থার কোন বিকল্প নেই। সাধারণ সিলিন্ডারে প্রতি মিনিটে ১৫ লিটার অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব। করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের দরকার হয় তাদের ৫০ ভাগ সুস্থ হয়ে যান ১৫ লিটারের মধ্যেই। কিন্তু এরপরও যাদের অতিরিক্ত অক্সিজেন দরকার হয় তাদের জন্য হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা যন্ত্র লাগে। এটা দিয়ে ৫০/৬০ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন দেয়া সম্ভব। কিন্তু সংকটময় পরিস্থিতিতে কি কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উচ্চ প্রবাহের অক্সিজেন সরবরাহ করছেন না এটা বোধগম্য না। হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ৩৫ শতাংশ রোগী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।  

যাদের অধিকাংশের প্রয়োজন পড়ছে পড়ছে উচ্চ প্রবাহের অক্সিজেন। এরপরেও হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে না। এতে রোগীর মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ছে। গত ১৪ দিনে  আইসিইউ, এইচডিইউ ও রডজোন চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯৩ জন করোনাক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ১ জুলাই ৪ জন, ২ জুলাই ৪ জন, ৩ জুলাই ৭ জন, ৪ জুলাই ৭ জন, ৫ জুলাই ৬ জন, ৬ জুলাই ৬ জন,  ৭ জুলাই ৬ জন, ৮ জুলাই ৫ জন, ৯ জুলাই ৭ জন, ১০ জুলাই ১০ জন, ১১ জুলাই ৬ জন, ১২ জুলাই ১২ জন, ১৩ জুলাই ৯ জন  ও ১৪ জুলাই ৪ জন মারা যান।

এই বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান জানান, হাসপাতালের নিজস্বভাবে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা রয়েছে ১৫ টি। এছাড়া সাজেদা ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডেশেনের দেয়া আরও ৬ টি রয়েছে। রোগীদের উচ্চ প্রবাহের অক্সিজেন প্রয়োজন হলে এগুলো ব্যবহার করা হবে। তিনি আরও জানান, হাই ফ্লোতে অনেক অক্সিজেন ব্যয় হয়। যে কারণে বিকল্প ব্যবস্থায় রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে রোগীও ভালো থাকছে আবার অক্সিজেন কম পরিমাণে ব্যয় হচ্ছে। তবে প্রয়োজনের সাথেই রোগীকে হাই ফ্লো অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।