বাড়ছে রোগীর চাপ

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ ও অক্সিজেনের তীব্র সংকট

গাজী জাহাঙ্গীর আলম জাবির, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি জুলাই ১২, ২০২১, ১১:২৩ এএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

কুমিল্লাঃ আইসিইউর একটি বেডের জন্য করোনা ওয়ার্ডে চলছে হাহাকার। রোগীর স্বজনদের আর্তনাদ আর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছে হাসপাতালের পরিবেশ। অ্যাম্বুলেন্সের শব্দে আঁতকে উঠছেন সাধারণ মানুষ। প্রতিদিন বাড়ছে রোগীর চাপ।

করোনা আইসোলেশন ইউনিট রোগী দ্বারা ইতোমধ্যে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। ফলে সুযোগ থাকছে না নতুন রোগী ভর্তি করার। গড়ে প্রতিদিন ৫০-৬০ জনের বেশি রোগী ভর্তি হওয়ায় হাসপাতালটিতে শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে। এমনকি ফাঁকা নেই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)। আইসিইউ সুবিধা পেতে করোনা রোগীদের মধ্যে হাহাকার পড়ে গেছে। আইসিইউ-র সুবিধা পেতে রোগীদের দীর্ঘ সিরিয়াল পার করতেও হচ্ছে। ইতিমধ্যে কর্তৃপক্ষ থেকে ৫০০ অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। যা কয়েক দিনের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে কেউ কেউ বিনামূল্যে অক্সিজেনের সরবরাহ করছেন ।
 
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে আসা আব্দুর রহিম নামে এক ব্যক্তি (৩৭) বলেন, রোববার দুপুর ১টায় হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে তার বাবা ভর্তি হয়েছে। এখনও বেড পাননি। অতিরিক্ত বেডে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের পরিবর্তে সিলিন্ডার অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। তবে এখানে ডাক্তার-নার্সরা অনেক আন্তরিকতার সঙ্গে চিকিৎসা দিচ্ছেন বলে তিনি জানান।
 
জেলার মুরাদনগর উপজেলার থেকে, ৮০ বছরের বৃদ্ধ মাকে নিয়ে আসা আসমা বেগম জানান, সকাল ৭টায় মাকে নিয়ে এসেছি। মায়ের অবস্থা সংকটাপন্ন। অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই বলছেন চিকিৎসক। শহরের কোথাও খুঁজেও পাইনি। চিকিৎসক বলেছেন রাতে নাকি দিবে। ভাই আমরা এখন কোথায় যাবো?
 
হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মো. মহিউদ্দিন নিজেই করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নতুন করে ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের দায়িত্ব পাওয়া ডা. রেজাউল করিমও করোনা আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। সর্বশেষ রবিবার (আজ) দায়িত্ব পেয়েছেন ডা. সাজিদা খাতুন ।
 
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. সাজিদা খাতুন বলেন, চলতি সপ্তাহে হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের ভর্তি  বেড়েছে। এ হাসপাতালে করোনা ইউনিটে ৩০টি আইসিইউ বেড ও ১৮৬টি সাধারণ বেড রয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি রয়েছে ২২০ জন। তাই জনগণ সচেতন না হলে আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে আরও বাড়তে পারে। সম্প্রতি হাসপাতালের ১০৩ জন ডাক্তার বদলি হওয়ায় পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকা সত্ত্বেও জনবল সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে নার্স, আয়াসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নতুন সবাইকে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ করা যাচ্ছে না। নতুন রোগীদের সিলিন্ডার অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে।
 
সরেজমিন দেখা যায়, শয্যা সঙ্কটের কারণে অধিকাংশ রোগীর ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের বারান্দা ও মেঝেতে। একাধিক নতুন মুমূর্ষ রোগীকে দেখা গেছে করোনা ইউনিটের নীচতলায় বেডের জন্য অপেক্ষা করতে। এছাড়াও রোগী নামানোর সিগন্যাল না পেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে অক্সিজেন লাগিয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে রোগীদের। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জেলার ১৭ উপজেলা ছাড়াও ফেনী, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসছেন রোগীরা।
 
কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসেন বলেন, করোনার প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় বর্তমানে সর্বোচ্চ শনাক্ত রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মৃত্যু তো বাড়ছেই। সিটি কর্পোরেশনসহ ১৭ উপজেলায় বাড়ছে মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা। সাধারণ মানুষের অসচেতনতার কারণে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন।