রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ড

জীবন বাঁচাতে কারখানার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে শ্রমিকরা

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি জুলাই ৯, ২০২১, ০১:৩০ এএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

নারায়ণগঞ্জঃ জেলার রূপগঞ্জে ভুলতা কর্ণগোপ এলাকায় একটি কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। সেখান থেকে বাঁচতে ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েন অনেকে। তবে এসময় অনেকেই কারখানার ভিতরে আটকা পড়েন।

বৃহস্পতিবার (০৮ জুলাই) বিকালে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করছে। এ ঘটনায় মিনা আক্তার (৪০) ও স্বপ্না রানী (৩৩) নামে দুই নারী শ্রমিক নিহত হয়েছেন। স্বপ্না সিলেটের যথি সরকারের স্ত্রী। মিনা আক্তার রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল নতুনবাজার এলাকার হারুন মিয়ার স্ত্রী। নিহত স্বপ্না রানীর মেয়ে বিশাখা রানীও এখানেই কাজ করেন।

এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক শ্রমিক। এর মধ্যে ১০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে রূপগঞ্জের ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজে ১৬ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।

সেজান জুস ফ্যাক্টরি নামে পরিচিত হাশেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ভবনের ছাদে আটকে পড়া ১২ জন শ্রমিককে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। আতঙ্কিত হয়ে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে অধিকাংশ হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।

আগুনে দগ্ধ ও ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আহতরা হলেন- স্বপ্না, মানিক, আশরাফুল, সুমন, মোরছালিন, সজিব, মেহেদী, মুন্না, মাজেদা, রুমা, মনোয়ারা, নাদিয়া, আছমা, মারিয়া, রুজিনা, সুমা, শফিকুল, সুফিয়া, সুজিদা, পারুল, রওশন আরা, শ্যামলাকে রূপগঞ্জের কর্ণগোপ ইউএস বাংলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া নাহিদ, মনজুরুল, দ্বীপা, মহসিন, আব্দুর রহমান, আবু বক্কর, আমেনাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাদের বয়স ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।

এসময় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফ্যাক্টরির ছয়তলা বিশিষ্ট ভবনের তৃতীয়তলা থেকে গ্যাস লাইন লিকেজ কিংবা বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। মুহুর্তেই আগুনের লেলিহান শিখা ভবনের সব ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে ফ্যাক্টরির কাঁচামাল, উৎপাদিত পণ্য ও মূল্যবান সামগ্রীসহ বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়।

খবর পেয়ে কাঞ্চন, পূর্বাচল, ডেমরা, আড়াইহাজার, আদমজী ফায়ার স্টেশনের ১২ ইউনিটের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। আগুনে ভবনের বিভিন্ন তলায় ফ্যাক্টরির কর্মচারী ও কর্মকর্তারা আটকা পড়ে। কেউ কেউ লাফিয়ে নিচে পড়ে আহত হয়। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ সময় মহাসড়কের উভয়পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া আগুনে নিহতের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে শ্রমিকরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে আহত হন।

ফ্যাক্টরির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কারখানার গ্যাস লাইন লিকেজ কিংবা বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটতে পারে। ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা যায়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ্ নুসরাত জাহান ও রূপগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পূর্বাচল ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা উদ্দীপন বলেন, আগুন লাগার ৩০ মিনিটের মধ্যেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করছেন।

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ্ নুসরাত জাহান বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করে। আগুনে আটকে পড়া ভবনের ছাদ থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ১২ জন শ্রমিককে উদ্ধার করেছে।