ভূমি অধিগ্রহণের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় 

ঢাকা-ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কের ৪ লেন উন্নতি করণ কাজ থমকে আছে

মাদারীপুর প্রতিনিধি জুলাই ৬, ২০২১, ০৯:৫২ পিএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

মাদারীপুরঃ ঢাকা-মাদারীপুর বরিশাল মহাসড়কের ৪ লেনে উন্নতি করণের কাজ ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় থমকে আছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি ৪ লেনে উন্নতিকরণ করা হলে কমে আসবে দুর্ঘটনা। সেই সাথে উন্নত হবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান। কিন্ত এই ভূমি অধিগ্রহণ কাজ দীর্ঘ দিনেও শেষ হয়নি। এতে করে দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ন এই জাতীয় মহাসড়কের ৪ লেনের নির্মাণ কাজ থমকে আছে। তবে জেলা প্রশাসক জানালেন আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কথা অস্বীকার করে ৪ লেনের কাজ চলছে।


মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কের প্রথম ধাপে নির্মিত হয়েছে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৬১ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে। এ সড়কে ৪ লেনের সঙ্গে যোগ হয়ে ধীরগতির যানবাহন চলাচল করছে দু’পাশে দুটি সার্ভিস লেন দিয়ে। কিন্তু দীর্ঘ এ সড়কের ফরিদপুর ভাঙ্গার মোড় থেকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর, মাদারীপুরের রাজৈর, সদর উপজেলা ও কালকিনি উপজেলা হয়ে পটুয়াখালীর পর্যটন এলাকা কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়কের পুরোটাই সরু এবং বিভাজক না থাকার কারণে এতে ঘটছে অহরহ দুর্ঘটনা। যানবাহনের গতি ধীর হয়ে যায়। ফলে এ সড়ক পাড়ি দিয়ে কুয়াকাটা পৌঁছতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। এ সমস্যার সমাধান এবং পদ্মা সেতুর সুফল পেতে ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত আধুনিক সড়ক নির্মাণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে অনুযায়ী ২০১৬ সালের শেষের দিকে শুরু হয়ে ছিল সড়ক নির্মাণের সমীক্ষার কাজ। ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর মাসে একনেকে অনুমোদন পায় এই প্রকল্পটি। এই প্রকল্পে শুধু জমি অধিগ্রহণের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ ‘একনেক’ ১ হাজার ৮৬৭ কোটি ৮৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা অনুমোদন দিয়েছিল। যা ২০২০ সালে ৩০ জুনের মধ্যে জমি অধিগ্রহণ শেষ করার নির্দেশনা ছিলো। কিন্তু নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়নি।  

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ভূমি অধিগ্রহণ শেষ করার পরে সড়ক বিভাগকে জমি বুঝিয়ে দিলেই তারা টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারবে। তবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ভূমি অধিগ্রহণ শেষ না হওয়াতে থমকে আছে সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ। এই মহাসড়কটির কাজ শেষ হলে এই অঞ্চলের মানুষের জীবন যাত্রারমান অনেক উন্নত হবে। কমবে দুর্ঘটনা এবং পণ্য পরিবহন করা আরো সহজ হবে।

কুয়াকাটা থেকে মাছ বোঝাই করে ঢাকাগামী ট্রাক চালক মহিউদ্দিন বেপারী জানালেন, কুয়াকাটা হয়ে বরিশাল থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৪ লেন হয়ে গেলে, আমরা খুব সহজে কম সময়ে গাড়ি চালাতে পারবো। এতে দুর্ঘটনাও কমে যাবে। বরিশাল-ভাঙ্গা মহাসড়কটি দ্রুত ৪ লেন করার দারি জানাচ্ছি। একই কথা বললেন, আরো বেশ কয়েকজন গাড়ি চালক। 

এদিকে মাদারীপুর সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সহ-সভাপতি ফায়জুল শরীফ বলেন, মহাসড়কটি দ্রুত ৪ লেন করা হলে সড়ক দুর্ঘটনা একদমই কমে যাবে।

মাদারীপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য এম.আর.মুর্তজা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই শুনে আসছি, ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কটি ৪ লেন হবে। কিন্তু এখনো মহাসড়কটি উন্নতিকরণের তেমন দৃশ্যমান অগ্রগতি চোখে পড়েনি। আমরা দারি করছি, সকল আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করে অতিদ্রুত ভূমি অধিগ্রহণ করে ৪ লেন নির্মাণ কাজ শুরু করা হোক। তাহলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনমান বদলে যাবে।

মাদারীপুর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ভূমি অধিগ্রহণে একটু সময় বেশি লাগে তাই ভূমি অধিগ্রহণের জন্য আলাদা ডিপিপি প্রনয়ণ করা হয়েছে এবং ডিজাইন প্রনয়ণের কাজ চলছে। তবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে যতদ্রুত ভূমি অধিগ্রহণ করা শেষ হবে, ততো দ্রুত ৪ লেনের কাজ শুরু হবে।

তবে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড.রহিমা খাতুন আমলাতান্ত্রিক জটিল ভূমি অধিগ্রহণ থমকে নেই জানিয়ে বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের জন্য যৌথ তদন্ত শুরু হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ কাজ শেষ হলেই পরবর্তী কাজ শুরু হবে। 

ভূমি অধিগ্রহণ একটি সময় সাপেক্ষের কাজ বলেও দাবি করেছেন জেলা প্রশাসক ড.রহিমা খাতুন। তবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের এখন প্রাণের দাবি অতিদ্রুত ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কটি ৪ লেনে উন্নতিকরণ করা হোক।