লক্ষ্মীপুরঃ মেঘনা তীরবর্তী উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর বিগত সময়ের তুলনায় তিনগুণ গতির তীব্র ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। এতে করে গেল ১০ বছরে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ ভিটেমাটি হারিয়ে বাস্তুহারা হয়েছে।
ধারাবাহিক ৩০ বছরের ভাঙ্গনে জেলার রামগতি ও কমলনগর উপজেলার প্রায় ২শ ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নদী গর্ভে পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে। এর মধ্যে গেল দশ বছরেই মেঘনায় বিলুপ্ত হয়েছে ১শ ৭০ বর্গকিলোমিটার এলাকা।
গত ২ বছর যাবত ভাঙ্গন ছাড়াও লোকালয়ে ও ফসলী জমিতে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ছে। চলতি বছরে নতুন সমস্যা যোগ হয়েছে জোয়ারের পানিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততা। স্থানীয় এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের নথিপত্র পর্যালোচনা ও সংশ্লিষ্টজনদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ভাঙ্গন কবলিত মেঘনাপাড় এলাকায় স্থায়ী ও টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবী করছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়ভাবে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর এবং কমলনগর উপজেলার পশ্চিম সীমানার উত্তর-দক্ষিণ এবং রামগতি উপজেলার পশ্চিম ও দক্ষিণ বরাবর মেঘনা নদী বহমান। কমলনগর উপজেলায় মেঘনার দৈর্ঘ্য ১৭ এবং রামগতিতে ২০ কিলোমিটার। দুই উপজেলার ৩৭ কিলোমিটার মেঘনা নদী তীরবর্তী এলাকায় প্রতিনিয়ত এর উপকূল ভাঙ্গছে। ভাঙ্গনের ইতিহাস এবং নানা তথ্য উপাত্ত থেকে দেখা যায় বিগত সময়ের তুলনায় গত ১০ বছরে মেঘনা নদী ভাঙ্গনের হার তিনগুণ বেড়েছে।
১৯৯১ সালের আদমশুমারী প্রতিবেদনে সাবেক রামগতি (রামগতি-কমলনগর) উপজেলার আয়তন ছিল ৬৬৩ বর্গকিলোমিটার। ২০ বছর পর ২০১১ সালের আদমশুমারী প্রতিবেদনে সে আয়তন উল্লেখ করা হয় ৫৯৪ বর্গকিলোমিটার। যাতে দেখা যায় ২০ বছরে মেঘনায় বিলীন হয়ে যায় ৬৯ বর্গকিলোমিটার এলাকা। ২০১১ সালের পর আর কোন আদমশুমারী হয়নি।
এর মধ্যে এ অঞ্চলে নদী ভাঙ্গনের গতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ভাঙ্গন কবলিত ইউনিয়ন পরিষদগুলোর চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন, ভাঙ্গনের তীব্রতায় গত ৫ বছরেই বিলীন হয়েছে কমলনগর উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন পরিষদের ১৫টি ওয়ার্ড।
কি কারণে মেঘনায় হঠাৎ করে এত ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে, স্থানীয়ভাবে কেউই তা জানাতে না পারলেও জানা যায়, রামগতি কমলনগরের কিছু এলাকায় আগে মাটির বেঁিড়বাঁধ ছিল। ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে বাঁধের ৩৭ কি. মি. মেঘনা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এরপর সে বাঁধ আর তৈরি করা সম্ভব হয়নি। এরপর লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে ব্যাপকহারে নদীর তীর ভাঙ্গছে।
নদীতে ভিটেমাটি হারাদের আন্দোলনরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, কমলনগর-রামগতি বাচাঁও মঞ্চের আহবায়ক ও সুপ্রীম কোর্টে আইনজীবি আবদুস সাত্তার পলোয়ান জানান, মেঘনার ভাঙ্গনে কি পরিমাণ গ্রাম, স্থাপনা আর সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে তা নির্ণয় করা কষ্টসাধ্য। তিনি সরকারিভাবে তা নির্ণয় করে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ ও বর্তমান জনগোষ্ঠির জন্য টেকসই বেঁড়িবাঁধ নির্মাণের দাবী জানান।
কমলনগর-রামগতি আসনের সংসদ সদস্য মেজর (অব) আবদুল মান্নান জানিয়েছেন, দু উপজেলার নদী ভাঙ্গনরোধ করতে একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। আশা করি, সে প্রকল্পের মাধ্যমে নদীর তীররক্ষা করা সম্ভব হবে।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, জেলার ৪টি উপজেলা উপকূলীয় হলেও রামগতি এবং কমলনগরে ব্যাপক হারে নদী ভাঙ্গছে। সদর ও রায়পুরে তেমন নদী ভাঙ্গন নেই। তিনি জানান, জেলার দুটি উপজেলার ৩১ কিলোমিটার মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিন হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন হয়েছে। প্রকল্পটির অর্থছাড় পেলে ভয়াবহ ভাঙ্গন কবলিত মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হবে বলেও জানালেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা।