রংপুরঃ আড়াই বছর আগে বাংলাদেশ থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেছিলেন মিলন (২৪) ও তার বন্ধু হাবিবুর (২৫)। সেখানকার হুগলি জেলায় রং মিস্ত্রির কাজ নিয়েছিলেন তারা। ওই সময়ে মিলনের সাথে প্রীতি প-িত (১৭) নামে এক ভারতীয় তরুণীর পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মাঝে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। পরে মিলন ও হাবিবুর দেশে ফিরে আসেন।
কিন্তু থেমে থাকেনি মিলন-প্রীতির প্রেমালাপ। মোবাইল ফোন, ইমো ও ফেসবুক মেসেঞ্জারে এগিয়ে চলে তাদের সম্পর্ক। এভাবে দীর্ঘ দুই বছর সম্পর্ক চলার পর অবশেষে প্রেমের টানে প্রীতি পন্ডিত ছুটে এসেছেন বাংলাদেশের রংপুরে। কিন্তু অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের দায়ে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সঙ্গে প্রেমিক মিলন মিয়া ও তার বন্ধু হাবিবুর রহমানকেও থানায় নেওয়া হয়েছে।
রোববার (২৭ জুন) দুপুরে ভারতীয় তরুণীসহ তিনজনকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর সদর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান। বিকেলে প্রেমিক মিলন ও তার সহযোগীসহ ওই ভারতীয় তরুণীকে রংপুর সদর কোতোয়ালি আমলি আদালতে হাজির করা হবে।
এর আগে শনিবার (২৬ জুন) বিকেলে জেলার মিঠাপুকুরের রানীপুকুর ইউনিয়নের নূরপুর বালাপাড়া গ্রামের লতিফুল ইসলামের বাড়ি থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। প্রীতি প-িত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার কোতোয়ালি থানার ভাংত জাংলা গ্রামের মন্টু পন্ডিতে মেয়ে। সে গত ২৪ জুন যশোরের বেনাপোল সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) বিকেলে প্রীতি পন্ডিত যশোর থেকে রংপুরে চলে আসেন। তার প্রেমিক মিলন মিয়া ওই তরুণীকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার সদ্যপুষ্কুরিণী ইউনিয়নের পালিচড়া ফাজিলখাঁ নয়াপুকুরে নিয়ে যান। সেখানে পৌঁছলে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে প্রীতিকে নিয়ে মিলন তার বন্ধু হাবিবুরের সহায়তায় পার্শ্ববর্তী রানীপুকুরে নিকট আত্মীয় লতিফুলের বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপনে থাকার চেষ্টা করেন। পরে পুলিশ খবর পেয়ে সেখান থেকে তাদের তিনজনকে গ্রেফতার করেন।
অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার দায়ে প্রীতি পন্ডিতকে পুলিশের হেফাজতে থানায় রাখা হয়েছে জানিয়ে সদর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম জানান, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার মন্টু প-িতের মেয়ে প্রীতি পন্ডিতের (১৭) সঙ্গে রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুস্কুরিণী ইউনিয়নের মহির উদ্দিনের ছেলে মিলনের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। সেই সম্পর্কের টানে গত ২৪ জুন ভারত থেকে যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে রংপুরে আসেন প্রীতি। এরপর সে প্রেমিক মিলনের বাড়িতে বাড়িতে অবস্থান করছিল।
এসআই আরও জানান, পুলিশ ওই তরুণীর বিষয়টি জানার পর অভিযানে নামে। এই সংবাদ জানতে পেয়ে ভয়ে মিলন একই গ্রামের বাবলু মিয়ার ছেলে তার বন্ধু হাবিবুর রহমানের সহায়তায় পার্শ্ববর্তী মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর ইউনিয়নের নূরপুর বালাপাড়া গ্রামে আত্মীয় লতিফুল ইসলামের বাড়িতে চলে যান। পরে তাদেরকে সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয়।
বিনা পাসপোর্ট ও অনুমতি ছাড়া সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে সদর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করা হয়েছে জানিয়ে ওসি তদন্ত মনতাজুর রহমান জানান, ওই ঘটনায় মানবপাচার আইনের ৬,৭,৮ ও ১০ ধারার আলোকে একটি মামলা হয়েছে। মামলার বাদী এসআই জাহাঙ্গীর আলম ভারতীয় তরুণীকে সেভ হোমে রাখার জন্য আমলি আদালতের বিচারকের কাছে আবেদন করেছেন।
রংপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, শনিবার অভিযান চালিয়ে ভারতীয় এক তরণীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেফতার তিনজনকে বিকেলে আদালতে পাঠানো হবে।