কুড়িগ্রামঃ নির্মাণের প্রায় দুই যুগেও রাজারহােেটর ১০টি আবাসন ও আশ্রয়ন প্রকল্পের কোন সংস্কার হয়নি। বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে আবাসন প্রকল্পের ঘরগুলো। ফলে ৫২০টি পরিবারের প্রায় ২ হাজার মানুষ নিদারুণ কষ্টে দিনযাপন করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০০ থেকে ২০০৬ইং পর্যন্ত বিভিন্ন সময় সরকারী খাস জমির উপর সরকারী অর্থায়নে উপজেলার সদর ইউনিয়নের দূর্গারাম মৌজায় ১শ পরিবারের বসবাসের জন্য দূর্গারাম আবাসন প্রকল্প, ৪০ পরিবারের জন্য দুধখাওয়া মৌজায় দুধখাওয়া গুচ্ছগ্রাম,ছিনাই ইউনিয়নের জয়কুমোর মৌজায় ২শ পরিবারের বসবাসের জন্য জয়কুমোর আবাসন, ওই ইউনিয়নের মীরের বাড়ি মৌজায় ৩০ পরিবারের জন্য গুচ্ছ গ্রাম, একই মৌজায় ২০ পরিবারের জন্য মীরেরবাড়ি আশ্রয়ন প্রকল্প, বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চর বিদ্যানন্দ মৌজায় ২০টি পরিবারের জন্য চর বিদ্যানন্দ আশ্রয়ন প্রকল্প, পশ্চিম চর বিদ্যানন্দ মৌজার ৪০টি পরিবারের জন্য পশ্চিম চর বিদ্যানন্দ আশ্রয়ন প্রকল্প, একই ইউনিয়নের ডাংরারহাট মৌজায় ৩০টি পরিবারের জন্য আদর্শ গ্রাম এবং ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের ঘড়িয়াল ডাঁঙ্গা মৌজার ২০টি পরিবারের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্প ও একই ইউনিয়নের সুলতানপাড়া গ্রামে ২০টি পরিবারের জন্য গুচ্ছগ্রাম নির্মান করা হয়। পরে ১০টি প্রকল্পে ৫২০টি ভূমিহীন পরিবারকে এসব ঘর বরাদ্দ প্রদান করা হয়। বর্তমানে এসব প্রকল্পে ৫২০টি পরিবারের ২হাজারেরও বেশি লোক বসবাস করে আসছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মেঝে কাঁচা ঘরগুলোর নীচের দিকে টিনগুলো মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরের চালের টিনে ফুটো হওয়ায় বৃষ্টির সময় ঘরের ভিতর ঝড়ঝড় করে পানি পরে। অনেকে টিনের নিচ দিয়ে পলিথিন লাগিয়ে রেখেছেন। দরজা গুলো ব্যবহারের অনুপযোগী, টিনের বেড়া দিয়ে সেই সময় তৈরী ল্যাট্রিনগুলো ভেঙ্গে পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও কেউকেউ পুরাতন কাপড় দিয়ে ঘিরে রেখে তাই ব্যবহার করছেন। ১০টি টিউবয়েলের মধ্যে ৪টিই অকেজো। আবাসন প্রকল্পের ঘরগুলো এতটায় নীচু যে, ভিতরে প্রবেশ করতে হলে মাথা নীচু করে প্রবেশ করতে হয়। ঘরের বাইরেও আঙ্গিনা অসামঞ্জস্যপূর্ন ছোট। অস্বাস্থ্যকর ও স্যাতস্যাতে পরিবেশের কারনে আবাসন প্রকল্পে বসবাসকারী শিশু, কিশোর ও বয়বৃদ্ধাদের বারো মাসেই রোগব্যাধি লেগে থাকে বলে জানা যায়। এদিকে নির্মানের প্রায় দুই যুগেও এসব ঘর কখনো মেরামত করা হয়নি বলে জানান প্রকল্পে বসবাসরত বাসিন্দরা।
আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা হাছেন,আজিজল ও মোফিজুল জানান, পূর্বের ল্যাট্রিন গুলো নষ্ট হওয়ার পর এলজিএসপি’র অর্থায়নে ২টি ও সরকারী অর্থায়নে ২টি এবং রেডক্রিসেন্ট ১টি পাকা ল্যাটিন নির্মান করে দিলেও ১শ পরিবারের প্রায় ৪শ মানুষের ক্ষেত্রে জনসংখ্যা অনুপাতে তা একেবারে কম। আঞ্জু বেগম ও মনোয়ারা জানান,ভারি বৃষ্টি হলে আবাসন প্রকল্পে প্রবেশের রাস্তাটি সহ কোন কোন ঘরের মেঝে ও আঙ্গিনায় এক হাঁটু পানি জমে। আবাসন প্রকল্পের সভাপতি আব্দুর রহমান জানান,এসব সমস্যার চিত্র বিভিন্ন সময় অনেকেই দেখে গেলেও সংস্কারের ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহন করেনি।
উপজেলার ডাংরার আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা আইয়ুব আলী,সুফিয়া,ফাতেমা,হাজেরা সহ অনেকে জানান, গৃহগুলো জরাজীর্ন ,ল্যাট্রিন ও টিউবয়েল ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় তাদের নানা কষ্টের কথা। এছাড়া কর্মহীন হয়ে তাদের অনেকে এখন মানবেতর দিনাতিপাত করছেন বলে জানান। প্রায় একই অবস্থা উপজেলার অন্যান্য আবাসন,আশ্রয়ন ও গুচ্ছ গ্রাম প্রকল্পে।
এদিকে জয়কুমোর আবাসন প্রকল্পে দেখা গেছে, ২০০ ঘরের মধ্যে ৪০/৫০টি ঘরের উপরে লোহার এঙ্গেলের ফ্রেম ছাড়া অবশিষ্ঠ কিছু নেই। বাকী মেঝে কাঁচা ঘরগুলোর নীচের দিকে মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। প্রায় ঘরের চালের টিনে ফুটো হওয়ায় বর্ষাকালে ঘরের ভিতর ঝড়ঝড় করে পানি পরে, শীতের সময় কুয়াশা ঝড়ে এবং গ্রীস্ম কালে রোদে পুড়ে। অনেকে টিনের নিচ দিয়ে পলিথিন লাগিয়ে রেখেছেন। দরজা গুলো ব্যবহারের অনুপযোগী, টিনের বেড়া দিয়ে সেই সময় তৈরী ল্যাট্রিনগুলো ভেঙ্গে পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও কেউকেউ পুরাতন কাপড় দিয়ে ঘিরে রেখে তা ব্যবহার করছেন।
২০টি টিউবয়েলের মধ্যে ১৪টিই অকেজো। ঘরগুলো অতিরিক্ত নীচু হওয়ার কারনে ভিতরে প্রবেশ করতে হলে মাথা নীচু করে প্রবেশ করতে হয়। ঘরের বাইরেও আঙ্গিনা অসামঞ্জস্যপূর্ন ছোট। অস্বাস্থ্যকর ও স্যাতস্যাতে পরিবেশের কারনে আবাসন প্রকল্পে বসবাসকারী শিশু, কিশোর ও বয়বৃদ্ধাদের বারো মাসেই রোগ ব্যধি লেগে থাকে বলে জানা যায়। এদিকে নির্মানের প্রায় ২ যুগ অতিবাহিত হলেও এসব ঘর কখনো মেরামত করা হয়নি বলে জানান প্রকল্পে বসবাসরত বাসিন্দারা।
জয়কুমোর আবাসন প্রকল্পে বসবাসকারী ছাবিরন (৬০) জানান “হ্যামার খবর কাঁইয়ো রাখেনা, ওই যে হ্যামাকগুলাক আনি থুইছে এ্যালা ক্যাদন আছি, নাই কাঁইয়ো পুছ করে না”।
আবাসনে বসবাসকারী ও ওই প্রকল্পের সভাপতি জাবেদ আলী জানান, স্থাপনের পর থেকে এপর্যন্ত কোন মেরামত না হওয়ায় অনেকে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে অন্যত্র চলে গেছেন।
ছিনাই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান হক বুলু জানান, ২শ পরিবারের আবাসস্থল জয়কুমোর আবাসনের এখন বেহাল অবস্থা। টিনের চালে ফুটা, দরজা ও বেড়ার টিন নষ্ট হয়ে যাওয়া সহ নানা কারনে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পরেছে। একাধিকবার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে যোগাযোগ করেও কোন লাভ হয়নি বলে জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরে তাসনিম আবাসন প্রকল্পগুলোর জরাজীর্নতার সত্যতা স্বীকার করে জানান, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ৫টি জরাজীর্ণ আবাসন প্রকল্পের তালিকা প্রেরন করা হয়েছে।