আগ্রহ হারাবেন ব্যবসায়ীরা

বেনাপোল কাস্টমের ৮ শর্তে আমদানি বাণিজ্য ধীরগতির শঙ্কা

মনির হোসেন, বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি জুন ২০, ২০২১, ০৫:৪৮ পিএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

যশোরঃ আমদানিকৃত পণ্যচালান কায়িক পরীক্ষণ ও শুল্কায়ন সহজ, দ্রুত, লক্ষ্যভিত্তিক, স্বচ্ছ, ব্যবসা বান্ধব ও সরকারি রাজস্ব সুরক্ষার স্বার্থে দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি বাণিজ্য ও পণ্য ছাড়ার ক্ষেত্রে ৮ শর্ত জারী করেছে বেনাপোল কাস্টম হাউস। কাস্টমের এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকরের কথা বলা হলেও এখনো কার্যকর হয়নি।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বলছেন, অধিকাংশ শর্ত নিয়ম মেনে আমদানি করতে গেলে এতে বাণিজ্যে যেমন ধীরগতি নামবে তেমনি অতিরিক্ত খরচ বেড়ে যাওয়ায় লোকসানের কারণে এপথে বাণিজ্যে আগ্রহ হারাবেন অনেক ব্যবসায়ীরা।

সম্প্রতি বেনাপোল কাস্টম কমিশনার মো: আজিজুর রহমান এর পক্ষে উপ কমিশনার এসএম শামীমুর রহমান স্বাক্ষরিত শর্ত জারীর অনুলিপিটি অবগতির জন্য বাণিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে, একটি সুনির্দিষ্ট ও ডিটেইল প্যাকিং লিস্ট (সুনির্দিষ্ট বর্ণনা, মার্কস নম্বর, আর্ট নম্বর, পার্ট নাম্বার ও ব্রান্ড নামসহ) এবং সুস্পষ্ট কান্ট্রি অব অরজিন থাকা বাধ্যতামূলক। আমদানিকৃত পণ্য চালানের বিপরীতে দাখিলকৃত বাণিজ্যিক দলিলাদির সঙ্গে  ডিটেইল প্যাকিং লিস্ট  এবং কান্ট্রি অব অরজিন দাখিল করতে না পারলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, আমদানিকৃত পণ্য চালানের  প্রতিটি প্যাকেজে একের অধিক আইটেম মিশ্রিত অবস্থায় আমদানি করা যাবেনা। একটি প্যাকেজে শুধুমাত্র একটি আইটেম আমদানি করা যাবে,  এসোটেড গুডস এর প্রতি চালানে ৫০০ এর বেশি প্যাকেজ আমদানি করা যাবেনা,  একটি পণ্য চালান টু হুইলার, থ্রি হুইলার ও ফোর হুইলার পার্টস মিশ্রিত অবস্থায় আমদানি করা যাবেনা।

পৃথক পৃথক পণ্য চালান আমদানি করতে হবে, ফেব্রিকস কিংবা অন্য কোনো পণ্যের কমন ঘোষণা (সব ধরণের ফেব্রিকস) না দিয়ে সুনির্দিষ্ট ভাবে যেমন শার্টি, প্যান্টিং, কটন, সিনথেটিক, ওড়না, সিনিল ভেলভেট ফ্রেব্রিকস প্রভৃতি নামে ঘোষণা দিয়ে পণ্য চালান আমদানি করতে হবে,  একই পণ্য চালান ২৫টির অধিক আইটেম আমদানি করা যাবেনা, সীমান্তে এন্ট্রি পয়েন্টে (প্রবেশের স্থান) পণ্য চালান রিসিভ করতে হলে সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মালিক কর্তৃক সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিকে প্রদত্ত এনওসি দাখিল করতে হবে ও অননুমোদিত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট/তাদের প্রতিনিধি/কর্মচারী কাস্টম হাউজে প্রবেশ এবং আমদানিকৃত পণ্য চালান খালাস কাজে নিয়োজিত করা যাবে না।

বাংলাদেশ মোটরপার্টস ব্যবসায়ী সমিতি যশোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর রহমান জানান, করোনায় একেতো ব্যবসায় মন্দাভাব যাচ্ছে, তার উপর এ ধরণের শর্ত ব্যবসার পরিবেশ নষ্ট করবে। বিশেষ করে ছোট আমদানিকারকরা ব্যবসা করতে পারবে না। কাস্টমের কাজ কম করার উদ্দেশ্যে এগুলো করা হয়েছে। অথচ সরকারকে আমরা রাজস্ব পরিশোধ করছি যথাযথভাবে। প্রয়োজনে সরকার লোকবল বাড়ানো হোক।

যশোর চেম্বার অব কর্মাসের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, কাস্টমস বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যে শর্ত জারি করেছে তা তৃণমূল পর্যায়ের ক্ষুদ্র আমদানিকারকেরা আর ব্যবসা করতে পারবেন না। কারণ এতে কনসাইনমেন্ট প্রতি আনুসাঙ্গিক খরচ দ্বিগুণ হারে বাড়বে। যার প্রভাব পড়বে দেশীয় বাজারে আমদানি পণ্যের উপর। তিনি আশা প্রকাশ করেন কাস্টম কর্তৃপক্ষ জারিকৃত কয়েকটি শর্ত পূর্ণ বিবেচনা করবেন।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, কাস্টমস কর্তৃক নির্দেশিত শর্তের কয়েকটি যৌক্তিকতা আছে। তবে এর অধিকাংশ শর্ত নিয়ম মেনে আমদানি করতে গেলে এতে বাণিজ্যে যেমন ধীরগতি নামবে তেমনি অতিরিক্ত খরচ বেড়ে যাওয়ায় লোকসানের কারণে এপথে বাণিজ্যে আগ্রহ হারাবেন অনেক ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে অবগত করা হয়েছে।

বেনাপোল কাস্টমস হাউজের উপ কমিশনার এস এম শামীমুর রহমান জানান, ৮ শর্ত মেনে পণ্য আমদানি হলে সরকারের যেমন রাজস্ব আয়ে স্বচ্ছতা বাড়বে তেমনি অনিয়ম অনেকাংশে কমে আসবে। খুব দ্রুত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলেও জানান তিনি।

জানা যায়, দেশে চলমান ১২টি স্থলবন্দরের মধ্যে সবচেয়ে বড় আর বেশি রাজস্ব দাতা বেনাপোল বন্দরের কাস্টমস হাউজ। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। চট্রগ্রাম বন্দরের পর বেনাপোল বন্দরের অবস্থান। প্রতিবছর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার আমদানি ও ৮ হাজার কোটি টাকার রফতানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। আমদানি বাণিজ্য থেকে সরকারের বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসে।

দেশের অন্যান্য বন্দর দিয়ে আমদানি বাণিজ্যে ব্যবসায়ীদের নানান বৈধ সুবিধা থাকলে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম জারীতে এপথে ইতিমধ্যে অনেক ব্যবসায়ীরা আমদানি বন্ধ করেছেন। এতে গত কয়েক বছর ধরে রাজস্ব আয় ব্যাপক হারে কমে এসেছে।