চাঁদপুরঃ ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে দেশের শীর্ষ ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন-টোয়াব নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯ জুন সন্ধ্যা ৭টায় চাঁদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারির সভাপতিত্বে ও সাবেক সভাপতি বিএম হান্নানের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল, ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) সভাপতি রাফিউজ্জামান রাফি ও সহ-সভাপতি শিবলুল আজিম কোরেশী, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদাত, জেলা পুলিশের ডিআই-১ তোতা মিয়া, ঢাকাস্থ চাঁদপুর সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় দৈনিক বানিজ্য প্রতিদিনের সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার পলাশ, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিলন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল রুশদী, আইরুমন্স বিডির ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. ইউনুছ উল্লাহ, প্রথম আলোর চাঁদপুর প্রতিনিধি আলম পলাশ, ইন্ডিপেন্ডেড টিভির চাঁদপুর প্রতিনিধি আব্দুল আউয়াল রুবেল, সিনিয়র সাংবাদিক মুনির চৌধুরী, চাঁদপুর টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি আল ইমরান শোভন, সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ ফেরদৌস, চাঁদপুর ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কেএম মাসুদ প্রমুখ।
চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমরা মানুষ হিসেবে অনেকেই মনে মনে ভ্রমণ করি। অনেক লেখক ঘরে বসেই মনের চোখ দিয়ে স্বপ্নের জায়গা ভ্রমণ করে বই লিখেছেন। কিন্তু আপনারা যারা ট্যুরিজম নিয়ে কাজ করেন, তারা অনেক জায়গা ঘুরে দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। আপনাদের দেখে দেখে আমরা ভ্রমণপিপাসু হয়ে উঠি। সেই আপনারাও সমাজ বিবর্তনের পথপ্রদর্শক।
তিনি বলেন, নদী মাতৃক জেলা হওয়ায় একটা সময় দেশের বাইরেও চাঁদপুরের গুরুত্ব ছিলো। মাঝে কালের পরিক্রমায় তার কিছুটা জৌলুস হারিয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে চাঁদপুরের সেই হারানো গৌরব ফিরে আসতে শুরু করেছে। চাঁদপুরে পর্যটনের সম্ভাবনার দেখা দিয়েছে। সরকারির পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নিতে হবে। ভালো মানের হোটেল করতে হবে। নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। আবকাঠামিগত উন্নয়ন করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের যা সম্পদ রয়েছে আছে তা সঠিকভাবে তুলে ধরতে হবে।
পৌর মেয়র আরে বলেন, পদ্মাসেতুর পর বাংলাদেশের মেঘা প্রকল্পে হবে চাঁদপুর-শরিয়তপুর মেঘনা সেতু। সরকার এখানে একটি ট্রানেল করার পরিকল্পনা করছেন। আমরা একটি পরিকল্পনার মধ্যদিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। এ ক্ষেত্রে আপনাদের সহযোগীতা প্রয়োজন। আমরা এখন পর্যটনের সম্ভাবনার কথা বলছি। আগামী দুই বছরের মধ্যে পর্যটন শিল্পের অগ্রগতির কাজ দৃশ্যমান করতে চাই।
টোয়াব সভাপতি রাফিউজ্জামান রাফি তার বক্তব্যে বলেন, আমরা পর্যটনকর্মী, দেশ আমাদের মা। আমরা মায়ের সেবা করি। চাঁদপুরে পর্যটন বাড়াতে মানসম্মান সেবা দিতে হবে। চাঁদপুরে কৃতি ব্যক্তিরা এই জেলার অলংকার। কিন্তু একটি বিষয়কে নির্ধারণ করতে হবে, আমরা পর্যটকদের কি দেখাবো। ইলিশ ফ্যাস্টিবল কন্টিউ করতে হবে। আমরা প্যাকেজ দিবো, কম খরচে ভ্রামণ করার সুযোগ দিবো। সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা করুন। প্রাচ্যের সিঙ্গাপুর হিসেবেও পরিচিত করতে পারেন। একজন টুরিস্ট আসা মানে ১৯টি সেক্টরে টার্চ করা। এই খ্যাতকে এগিয়ে নিতে আমরা কাজ করি।
টোয়াব সহ-সভাপতি শিবলুল আজিম কোরেশী তার বক্তব্যে বলেন, চাঁদপুরে এসে আমরা যা দেখলাম, এখানে পর্যটনের অনেক উপাদান রয়েছে। এখানের ইলিশ গোটা বিশ্বে পরিচিত। এখানকার নদী, সূর্যাস্ত পর্যটকদের আকর্ষণ করবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, চাঁদপুরে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এখানে যেভাবে এগোনোর কথা ছিলো, সেখাবে এগোয়নি। চাঁদপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক অব্দুস সবুর মন্ডল অনেক কাজ করেছেন, বর্তমান জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ও পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও সাংবাদিক-লেখকরা এখানকার ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরে অনেক কাজ করেছেন। দেশের উল্লেখযোগ্য পর্যটন এলাকার চেয়ে চাঁদপুরের সম্ভাবনা অনেক। এখানে অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। ঢাকাসহ সকল জেলা থেকে চাঁদপুরে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। সড়ক পথ, নৌ-পথ, রেল-পথে সহজ যোগা একদিনের সফরে কম খরচে চাঁদপুর ভ্রমণ করা সম্ভব। চাঁদপুর অন্যান্য জেলার চেয়ে নিরাপদ। পর্যটন শিল্পের বাড়ি চাঁদপুর হবে, পর্যটন নগরী হবে, সেই প্রত্যাশা করছি।
এর আগে ইলিশের বাড়ি খ্যাত চাঁদপুরে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা প্রত্যক্ষ করতে একদিনের সফরে শনিবার চাঁদপুরে আসেন দেশের শীর্ষ ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন-টোয়াব নেতৃবৃন্দ। ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) সভাপতি রাফিউজ্জামান রাফি ও সহ-সভাপতি শিবলুল আজিম কোরেশীর নেতৃত্বে ৬০ সদস্যের প্রতিনিধি দল দিনব্যাপী চাঁদপুর সফর করবেন।
আইরুমন্স বিডির ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোঃ ইউনুস উল্লাহর ব্যবস্থাপনায় এবং চাঁদপুর প্রেসক্লাবের আয়োজনে টোয়াব নেতৃবৃন্দ ঐতিহ্যবাহী চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাট, পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থল বড়স্টেশন মোলহেড, মেঘনার চরে জেগে ওঠা 'মিনি কক্সবাজার' এবং ডাকাতিয়া নদী পরিভ্রমণ করেন।