বরগুনা জেলা শহরের প্রবেশ মুখে টাউনহল মাঠে জমে উঠেছে হোগল পাতার হাট। দুর দুরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা হোগল পাতা নিয়ে এসেছেন বিক্রি করার উদ্দেশ্যে। ক্রেতা-বিক্রেতার এক মহাসমারোহ এই হাট। সপ্তাহে মঙ্গলবার ও শনিবার হাট বসে এই মাঠে। গ্রাম থেকে লোকজন আসে হোগল পাতা কিনতে। যার যার প্রয়োজন মত কিনে নিয়ে চলে যান। যুগের বিবর্তনে প্লাস্টিকের আধিক্যে হারিয়েই যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হোগল পাতা তবে বরগুনার হাটে এখনো এই পাতার চাহিদা রয়েছে উল্লেখযোগ্য।
হোগল পাতা, নদী বা খালের কিনারে জন্মানো উদ্ভিদ। দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের জীবন বৈচিত্রের অংশ এই হোগল পাতা। গ্রামের মানুষের কাছে যুগ যুগের ঐতিহ্য হোগল পাতার চাটাই বা হোগলা। মাটিতে বিছিয়ে খাওয়া-দাওয়া, ঘুমানো, ধান রোঁদে শুকানো, ফসলের খেতে বেড়া, ঘর নির্মাণ সহ নানাবিধ গৃহস্থালি কাজে হোগল পাতার চাটাই বেশ জনপ্রিয়। এই পাতা দিয়ে হাত পাখা ও তৈরী করা হয়। গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই গ্রীস্মের তীব্র গরমে হোগল পাতার পাতা পাখা দেখা যায়।
সাধারনত আষাঢ় - শ্রাবণ মাসে হোগল পাতা সংগ্রহ করার উপযুক্ত সময়। এই সময়ে পাতাগুলো পরিণত হয়। হোগল পাতা সংগ্রহ করার পর রোঁদে ভালো ভাবে শুকিয়ে চাটাই তৈরীর জন্য উপযুক্ত করা হয়। সঠিক পরিচর্যায় তৈরী করতে না পারলে এ পাতা ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পরে এবং অল্প সময়েই নষ্ট হয়ে যায়।
বরগুনা হাটের ক্রেতা আব্দুর রব বলেন, হোগল পাতা আমাদের বাঙ্গালীর ঐতিহ্যের একটি বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে। বংশ পরম্পরায় আমরা এই পাতা বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার করে থাকি। আমাদের ঘরের গৃহবধূরা গৃহস্থালি কাজে নানা ডিজাইনের পাটি, হাত পাখা, শিকে তৈরী সহ নানান রকমের জিনিস তৈরী করে। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় আস্তে আস্তে এই ঐতিহ্য বিলীন হয়ে যেতে বসেছে।
একজন বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা এক মোড়া বা আটি হোগল পাতা ৫০০-৯০০ টাকা দরে বিক্রি করে থাকেন, বাণিজ্যিক উৎপাদন না থাকায় চাহিদা মাফিক সরবারহ তারা সরবারহ করতে পারছেন না। বাঙ্গালীর এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে হোগলের সঠিক পরিচর্যা ও বাণিজ্যিক উৎপাদনের দিকে খেয়াল রাখার দবি জানান তিনি।
হোগলের ফলের গায়ে লেগে থাকা গুড়ি থেকে নানান মূখরোচক খাবার তৈরী হয়, প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হয় হোগল গুড়া। সর্বোপরী দক্ষিণাঞ্চলের জেলা বরগুনায় অর্থনৈতিক উন্নতি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে হোগল চাষে। যথাযথ ভাবে এর বাণিজ্যিক চাষ শুরু হবে এবং আরো বড় পরিসরে হাট বসবে বলে আশাবাদী বরগুনার সাধারণ জনগণ।