অক্সিজেন নিয়ে পাশে আরএমপি

রাজশাহীতে ১৫ দিনে মৃত্যু ১৪৮

আমানুল্লাহ আমান, রাজশাহী প্রতিনিধি জুন ১৫, ২০২১, ০৭:৪৭ পিএম
ছবি: আগামী নিউজ

রাজশাহী: মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ১৫ দিনে মারা গেছেন ১৪৮ জন। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। সোমবার (১৪ জুন) সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার (১৫ জুন) সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মারা যান এ ১২ জন। নগরীতে সর্বাত্মক লকডাউন চললেও করোনা পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তৈরি হয়েছে অক্সিজেন শঙ্কট। অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হওয়ার অভিযোগও এসেছে রোগীর স্বজনদের তরফ থেকে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় করোনা রোগীদের বিনামূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ করার উদ্যোগ নিয়েছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি)। গঠন করা হয়েছে ‘পুলিশ কোভিড অক্সিজেন ব্যাংক’। 

মঙ্গলবার (১৫ জুন) দুপুরে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন আরএমপি কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে জুন মাসের ১৫ দিনের মধ্যে গত ৪ জুন সর্বোচ্চ মৃত্যু হয় ১৬ জনের। আর গত ১২ জুন মারা গেছেন সর্বনিম্ন ৪ জন। তবে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১২ জনের প্রাণ গেছে। এ ১২ জনের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাতজন, রাজশাহীর তিনজন, নাটোর ও নওগাঁর একজন করে রয়েছেন। মৃতদের মধ্যে করোনা পজেটিভ ছিলেন ৮ জন। বাকি দুইজন মারা গেছেন উপসর্গ নিয়ে। 

হাসপাতাল সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (১৫ জুন) সকাল ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩২৫ জন। এদের মধ্যে ১৫৮ জন করোনা পজেটিভ। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ৫৮ জন ভর্তি হয়েছেন। আর ছাড় পেয়েছেন ৪৩ জন। করোনা ইউনিটে বর্তমানে বেড সংখ্যা ২৭৩। 

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মো. শামীম ইয়াজদানী জানান, বেড সংখ্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি থাকলেও বিকল্প উপায়ে বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। করোনা ওয়ার্ডের বাকি ৫২ রোগীর জন্য অন্যত্র থেকে বেডের ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা। রোগীর চাপে হিমশিম খেলেও সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। আন্তরিকতার সঙ্গে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা। 

তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় ভর্তি হওয়া ৫৮ জনের মধ্যে রাজশাহীরই রোগী ৩৯ জন। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের আট জন, নাটোরের চারজন, নওগাঁর পাঁচজন ও কুষ্টিয়ার রয়েছেন দুইজন। এদিকে হাসপাতাল ও এর বাইরে তৈরি হয়েছে অক্সিজেন সংকট। এটিকে কেন্দ্র করে করোনা রোগীর স্বজনদের জিম্মি করে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। একটি ব্যবসায়ী চক্র এমনটা করছে বলে রোগীর স্বজনদের অভিযোগ। তারা জানান, রাজধানী ঢাকায় ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়া অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম রাজশাহীতে দিতে হচ্ছে ২০ হাজার টাকা। ১৫ হাজার টাকা দামের সিলিন্ডার তারা কিনছেন ৩২ হাজার টাকায়। স্বজনদের বাঁচানোর তাগিদে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। তবে ঢাকা থেকে রাজশাহীতে সিল্ডিার আনতে অতিরিক্ত টাকার খরচ হওয়ায় এবং পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ না থাকায় দাম কিছুটা বেশি নেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের ভাষ্য, কোনোভাবেই রোগীর স্বজনদের জিম্মি করা হচ্ছে না। 

অন্যদিকে ‘পুলিশ কোভিড অক্সিজেন ব্যাংক’ গঠন করে রাজশাহী নগরীর করোনা রোগীদের জন্য বিনামূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ করার উদ্যোগ নিয়েছে আরএমপি। মঙ্গলবার (১৫ জুন) দুপুরে এর উদ্বোধন করা হয়। 

৫০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও দ্রুতই তা ১’শ তে উন্নীত করা হবে বলে উদ্বোধনকালে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আরএমপি কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক। তিনি বলেন, করোনা আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন এমন ব্যক্তি বা তার স্বজনরা কন্ট্রোল রুমের ০১৩২০-০৬৩৯৯৮ নম্বরে কল করলেই অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ পুলিশ সদস্য আক্তান্তের ঠিকানায় উপস্থিত হবেন। 

এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইন্সপেক্টরসহ ১০ জনকে সিলিন্ডার ব্যবহার, স্পিড মাত্রা নির্ধারণ ও রিফিল বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আরো কয়েকজনকে দেয়া হবে এ প্রশিক্ষণ। রোগীদের জন্য বিনামূল্যেই প্রদান করা হবে এ সকল সেবা। 

এদিন অক্সিজেন ব্যাংকের উদ্বোধনের সময় আরএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন) সুজায়েত ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) মজিদ আলী, উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) রশীদুল হাসান উপ-পুলিশ কমিশনার (বোয়ালিয়া) সাজিদ হোসেনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।